সোমবার, ২১শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** এবার তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে ডিসিদের চিঠি *** ৪৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫২০৬ *** খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত নেতানিয়াহু *** বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক: গোপালগঞ্জে প্রশাসন চাইলে রক্তপাত এড়ানো যেত *** পাকিস্তানকে উড়িয়ে ৯ বছর পর জিতল বাংলাদেশ *** এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হওয়ার বিষয়ে তিন দলের ভিন্ন প্রস্তাব *** এত ‘নির্দোষ, নিরপরাধ, নিষ্পাপ’ সরকার আমি দেখিনি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য *** গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ এনে কোটালীপাড়ায় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন *** গোপালগঞ্জে জারি করা কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার *** পাকিস্তানকে দাঁড়াতেই দিলেন না তাসকিনরা

প্রাচীন খাবারই কী ভালো ছিল

লাইফস্টাইল ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:১০ অপরাহ্ন, ১২ই জুলাই ২০২৫

#

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

বিকেল ঘনিয়ে এসেছে বলিভিয়ার আমাজন বনের ছোট্ট গ্রাম আনাচেরে। কুঁড়েঘরের মাটির মেঝেতে ধোঁয়া ওঠা আগুনে ফুটছে কলা আর ম্যানিয়ক দিয়ে তৈরি পাতলা একধরনের পায়েস। রান্নায় ব্যস্ত আনা কুয়াতা মাইতো। কোলে দুধপানরত শিশু, পাশে দাঁড়িয়ে সাত বছরের ছেলে।

আনার স্বামী দিওনিসিও নাতে প্রতিদিনের মতো ভোরে রওনা হয়েছেন বনের দিকে। একটি রাইফেল আর শিকারি কুকুর সঙ্গে নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েছেন খাবারের সন্ধানে। একেক দিন একধরনের খাবার জোটে। তিনি ফিরেছেন কয়েকটি কোয়াটি আর দুটি আর্মাডিলো নিয়ে। এগুলো সবই বণ্য প্রাণী। পরিবার এতেই খুশি। কারণ, মাংস খাওয়া মানেই বিশেষ দিন।

এভাবে আমাজনের গভীরে বসবাসরত চিমানে নামের আদিবাসীরা এখনো তাদের প্রাচীন জীবনযাপন চালিয়ে যাচ্ছেন। বনের ফলমূল, নদীর মাছ, নিজেদের চাষ করা কলা, ম্যানিয়ক, পেঁপে, লেবু ও অন্যান্য শস্য তাদের মূল খাবার। বনে শিকার করা, নদীতে মাছ ধরা আর নানা রকম বনজ সম্পদ সংগ্রহ ও ব্যবহার করেই বেঁচে আছে এই জনগোষ্ঠী। তথ্যসূত্র ন্যাশনাল জিওগ্রাফির।

চিমানে জনগোষ্ঠীর জীবনে সামান্য পরিবর্তনও এখন গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আমেরিকার কিছু গবেষক, বিশেষ করে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম লিওনার্ডর দল এই সম্প্রদায়ের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যের ওপর গবেষণা করছে।

গবেষকদের প্রশ্ন, আদিম খাদ্যাভ্যাস কী আধুনিক মানুষের জন্য উপযোগী? চিমানে জনগণের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসের প্রবণতা কম। কিন্তু যারা শহরের বাজার থেকে তেল, চাল, চিনি বা টিনজাত খাবার কিনে খাচ্ছেন, তাদের মধ্যে এসব রোগ বাড়ছে। এমন চিত্র শুধু চিমানেদের নয়।

আফ্রিকার হাদজা, কঙ্গোর পিগমি, গ্রিনল্যান্ডের ইনুয়িট কিংবা আফগানিস্তানের কিরগিজ জাতির জীবনের চিত্রটাও এমন। তাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাস যতটা প্রাকৃতিক, ততটাই স্বাস্থ্যকর।

বহু মানুষ মনে করেন, আদিম মানুষ মানেই কেবল শিকারি—প্রধানত মাংসভোজী। কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। প্রকৃতপক্ষে, প্রাচীন শিকারিরা অনেক সময়েই শিকার করতে ব্যর্থ হতেন। সে সময়ে তাদের বেঁচে থাকতে হতো বনজ ফলমূল, কন্দ, বাদাম, বুনো শস্য বা গাছের শিকড়ের ওপর ভরসা করে।

আফ্রিকার কুং ও হাদজা জাতির মানুষদের খাদ্যের প্রায় ৭০ শতাংশই উদ্ভিজ্জ। চিমানরা প্রতিদিনের ক্যালরির বড় অংশ পূরণ করেন কলা, ম্যানিয়ক ও অন্য শাকসবজি থেকে। তবে সুযোগ পেলে তারা অবশ্যই শিকার করা মাংস বা মাছ খেতে পছন্দ করেন।

গবেষকরা বলেন, ‘তুমি যা খাও, তুমি তাই’—এই কথাটি আংশিক সত্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের দেহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন—মানুষের দুধ হজম করার ক্ষমতা এসেছে কৃষি আবিষ্কারের পর।

আবার যেসব জনগোষ্ঠী বেশি আলু ও ভাতজাতীয় খাবার খেয়েছে, তাদের লালা রসে বেশি এমাইলেজ এনজাইম পাওয়া যায়। অর্থাৎ আমাদের পূর্বপুরুষরা কী খেতেন, তার ওপর আমাদের বর্তমান শারীরিক ক্ষমতা নির্ভর করে। মানুষের শরীর পরিবর্তিত হয়েছে তার খাদ্য অনুযায়ী। তাই একেক জনগোষ্ঠীর জন্য একেক রকম খাদ্য স্বাস্থ্যকর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের খাদ্য হওয়া উচিত ভারসাম্যপূর্ণ। স্থানীয় ফল, শাকসবজি, মাছ বা মাংস, শস্য এবং অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিশ্রম। হাদজা, ইনুয়িট, বাজাউ কিংবা চিমানে এসব জাতি তাদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে আছে।

এক কথায়, মানুষের প্রকৃত শক্তি হলো, বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন রকম খাবার খেয়ে টিকে থাকার ক্ষমতা। আমাদের খাদ্য হওয়া উচিত প্রাকৃতিক। আর প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা যায়, ততটাই দূরে থাকতে হবে।

জে.এস/

প্রাকৃতিক খাবার

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন