যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প : ছবি - সংগৃহীত
৫ই নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে প্রায় ছয় কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০২০ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এবারও তিনি প্রার্থী ছিলেন কিন্তু গত জুলাইয়ে শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বর্তমান প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন।
নির্বাচনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এবার কি দ্বিতীয় মেয়াদে জয় পেয়ে ক্ষমতায় বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট হবেন কমলা হ্যারিস। নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটাররা সহ সারা বিশ্বের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। হোয়াইট হাউজে কে বসবেন সেদিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব।
নির্বাচনের শুরু থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে এসেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে গত জুলাইয়ের শেষ দিকে প্রার্থী ঘোষণার পর নির্বাচনের মাঠে নামেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস। শুরুর দিকে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে যান। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ট্রাম্প ততই এগিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছে, দুই প্রার্থীই সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছেন। সব জরিপই বলছে, নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রতিটি রাজ্যে তার জনসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ভোট অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে যে প্রার্থী কমপক্ষে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি রাজ্য রয়েছে। প্রায় সবসময় একই দলকে ভোট দেয় কিছু কিছু রাজ্যের ভোটাররা। আবার এমন কিছু রাজ্য আছে যেখানে দুই দলের প্রার্থীদেরই জয় পাওয়ার সুযোগ আছে। এই রাজ্যগুলোকে সুইং স্টেট বলে। এগুলোতে প্রতিবছর মানুষের মতামত পরিবর্তনের প্রবণতা দেখা যায়। এসব রাজ্যে কেউ এগিয়ে থাকলে নির্বাচনে জয়ী হবে এবং পিছিয়ে পড়লে হেরে যাবে।
মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান দুর্গ বলে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় 'রেড স্টেট' বা 'লাল রাজ্য' আর ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য পাওয়া স্টেটগুলোকে বলা হয় 'ব্লু স্টেট' বা 'নীল রাজ্য'। ফলে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা নির্দিষ্ট কিছু ‘সুইং স্টেট’ এর দিকে নজর দেন যেখানে ভোট কোন পার্টির পক্ষে যাবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না।
এবারের নির্বাচনে ৭টি রাজ্যকে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্য হিসেবে ভাবা হচ্ছে। দোদুল্যমান রাজ্যগুলো হচ্ছে জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিন। এই ৭টি রাজ্যে মোট ৯৩টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। এই ভোটগুলোর ওপরই মার্কিন নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে। নির্বাচনে পেনসিলভেনিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। কেননা ওই সুইং সাতটি রাজ্যের মধ্যে এটিতে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যে কারণে এই রাজ্যে জয় পেলে তাদের জন্য ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজে জয় পাওয়া তুলনামূলক সহজ হয়।
দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোতে কেউ এগিয়ে বা পিছিয়েও নেই। নির্বাচনি প্রচারণায় নামার পর থেকে কমলা হ্যারিস কিছু রাজ্যে পরিবর্তন আনতে পেরেছেন বটে, কিন্তু অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাডা ও নর্থ ক্যারোলাইনায় আগস্টের শুরু থেকে বেশ কয়েকবার লিড হাতবদল হলেও এ মুহূর্তে সবগুলোতেই ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।
অন্য তিনটি রাজ্য মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে হ্যারিস আগস্টের শুরু থেকে ২ বা ৩ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক জনমত জরিপে পেনসিলভানিয়ায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন সামান্য ব্যবধানে এগিয়েও আছেন।
সর্বশেষ অধিকাংশ জরিপে ট্রাম্প ইলেক্টোরাল ভোটে সামান্য এগিয়ে রয়েছেন। তবে ব্যবধান এতটাই কম যে, যে কোনো সময় সেটা পরিবর্তন হতে পারে। তবে জরিপই শেষ কথা নয়, মার্কিন ভোটাররাই শেষ কথা বলবে। আগামী ৫ তারিখই জানা যাবে মার্কিন নির্বাচনে শেষ হাসি কে হাসবেন।
আই.কে.জে/