ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর রাজধানীর কিছু এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর প্রচারণার অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক তরুণরা জনসাধারণকে সচেতন করছেন প্ল্যাকার্ড হাতে এবং হ্যান্ড-মাইকে হর্ন বাজাতে নিষেধ করছেন। অথচ মোটরবাইক, বাস, মাইক্রোবাস ও ইঞ্জিনচালিত অটো রিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হর্ন বাজিয়েই যাচ্ছে।
বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে যে বিধিমালা রয়েছে, সেখানে বিস্তারিত বলা আছে—কোন এলাকায় দিনের কোন সময়ে কোন ধরনের শব্দের মাত্রা কেমন হবে। আর তা না মেনে চললে সাজার বিধানও রয়েছে। কিন্তু আইন কেউ মানছেন না।
আইনে বলা আছে, বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত নয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ এবং ভোর ছয়টার পর থেকে রাত নয়টার পূর্ববর্তী সময়ে মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ কাজের জন্য ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। আবদ্ধ কোনো স্থানে শব্দ করলে যাতে বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু নিয়মিতই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা ভঙ্গ হচ্ছে।
শব্দদূষণ রাজধানী ঢাকার মানুষদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ঢাকার উদ্বেগজনক এ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, কোনো কারণ ছাড়াই যানবাহনের হর্ন বাজানো। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাজধানীর বড় সড়কগুলোতে গাড়ির তীব্র হর্নের প্রতিযোগিতা চলে। নগরবাসীকে যানবাহন, হর্ন ও ভবন নির্মাণের শব্দের সঙ্গে লড়াই করেই টিকে থাকতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অকারণে হর্ন বাজানো সম্ভবত দেশের গাড়ি চালকদের একটা বদভ্যাস। তারা ট্রাফিক সিগনাল বা জ্যামে আটকে থাকার সময়, ট্রাফিককে তাড়া দিতে কিংবা সামনে যাওয়া যাবে না নিশ্চিত জেনেও ক্রমাগত হর্ন বাজাতে থাকেন। অনেক সময় পথচারীদের উদ্দেশ্য করেও হর্ন বাজান। অর্থাৎ, একশ্রেণির চালক আছেন, যারা কারণে-অকারণে হর্ন বাজান।
‘নীরব এলাকায়’ সাধারণত হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ। কিন্তু গাড়ির হর্নে ঢাকায় রীতিমতো বধিরতার হার বেড়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপে বলা হয়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও শব্দের মাত্রা ১৩০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে গেছে। যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) আওতায় পরিচালিত ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২: নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিশ্বে শব্দদূষণের প্রথম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আবাসিক এলাকায় অনুমতিযোগ্য শব্দের মাত্রা ৫৫ এবং বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবেল। অথচ ঢাকার শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল। শব্দদূষণের এই অতিরিক্ত মাত্রা মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শব্দদূষণের বিষয়ে যেমন নেই সচেতনতা, তেমনি নেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। ফলে রাজধানীতে শব্দের মাত্রা অসহনীয় পর্যায় চলে গেছে। যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শব্দদূষণের ফলে মানুষের শ্রবণশক্তির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া মস্তিষ্কে এক ধরনের বিরক্তির ভাব তৈরি হয়।
মাথা ঝিমঝিম করে ও ঘোরানোর অনুভূতি হয়। কাজে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। খুব দ্রুত মানুষ রেগে যান এবং এক সময় দেখা যায়, অনিদ্রায় আক্রান্ত হন। যার ফলে মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এইচ.এস/