সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুখবর বাংলাদেশ

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৮:৩০ অপরাহ্ন, ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৪

#

শংকর মৈত্র

রাজধানী ঢাকায় যখন মেট্রোরেলের গোড়াপত্তন হয় অর্থাৎ জরিপ কাজ শুরু হয় তখন অনেকেই এর পক্ষে ছিলেন না। বলা হচ্ছিলো হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই মেট্রোরেল বানানোর দরকার কী? গরীব দেশে এটা বিলাসী প্রকল্প।

এরচেয়ে রাজধানীর ভেতর দিয়ে যে রেললাইন গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছেছে সেটাকে আধুনিকায়ন করে কমিউটার ট্রেন বা শুধু রাজধানীর ভেতর চলাচল করার সুবিধা রেখে ট্রেন চালুর এমন পরামর্শও দিয়েছেন কেউ কেউ।

অর্থনীতিবিদদেরও অনেকে সমালোচনা করছিলেন, মেট্রোরেল এটা একটা শ্বেতহস্তী হবে, এটা আমাদের মানায় না। ঋণ করে এতো বড় প্রকল্প নেয়ার কোনো দরকার নেই। মোটকথা সব ধরনের নেতিবাচক কথাবার্তাই হয়েছে মেট্রোরেল নিয়ে।

কিন্তু এখন কী আর সেটা বলা যাবে? মেট্রোরেল কী এখন রাজধানীবাসীর একাংশের জীবনযাত্রা পাল্টে দেয়নি? ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের দুর্ভোগ কমায় নি? 

এক ম্যাজিকের মতো পাল্টে যাচ্ছে জীবনযাত্রা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন দিনে এখন আড়াই লাখ যাত্রী যাতায়াত করছেন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৭টি স্টেশনে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দ্রুতগামি মেট্রোতে চড়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টার পথ পৌঁছে যাচ্ছেন ৩৫ মিনিট সময়ে। এটা এক অবিশ্বাস্য পরিবর্তন এনে দিয়েছে নগরবাসীর জীবনে। যারা আগে চড়তেন বাস বা অটোরিক্সায়। 

এই পরিবর্তন এনে দিয়েছেন কে? একবাক্যে বলা যায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সুদূরপ্রসারী ও সুদৃঢ় পরিকল্পনায় এমন সুখবর এনে দিলো জনজীবনে। 

একটু পেছনে ফিরে যাই। নানা সমালোচনার মধ্যেও সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কাউন্সিল, একনেক ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে মেট্রোরেল প্রকল্প অনুমোদন করে। জাপান আর্থিক সহযোগিতার ঋণ ও প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে আসে। ২০১৬ সালের ২৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। শুরুতে মেট্রো রেলের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২১ হাজার ৯শ ৮৫ কোটি টাকা। পরে এই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা প্রায়। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়। বিলম্ব যা হয় তা মহামারী করোনার ভাইরাসের কারণে। 

দুভাগে বিভক্ত করে ২০২২ সালের ২৮ থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হয়। এর পর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল উদ্বোধন করা হয়। নানা ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ২০ জানুয়ারি থেকে এখন সকাল ৭টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল। পিক আওয়ারে প্রতি ১০ মিনিট পর পর আর অফপিকে প্রতি ১২ মিনিট পর পর মেট্রো চলাচল করে। প্রতিটি ট্রেনে ৬টি কামরা আর এক সঙ্গে দুই হাজার ৩শ ৮ জন যাত্রী ওঠতে পারেন। প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার  যাত্রী বহন করার সক্ষমতা রয়েছে এক একটি ট্রেনের।

গণমাধ্যমে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখন দৈনিক আড়াই লাখ যাত্রী বহন করছে। এটা ক্রমেই বাড়ছে এবং দৈনিক ৫ লাখ যাত্রী বহন করা হবে বলে জানান তারা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন এখন দিনে দেড় থেকে পৌনে দুই কোটি টাকা আয় হচ্ছে।  এ আয় বাড়ছেই। এখন যাত্রীর চাপ সামলানো যাচ্ছে না। ভিড় ঠেলে ওঠাই কঠিন। যাত্রীরা ট্রেনের বগি বাড়ানো এবং সময় কমানোর দাবি জানাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষও বিষয়টি বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছেন। হয়তো অচিরেই বগির সংখ্যা ৮টি আর ৫ মিনিট পর পর চলাচলের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। 

এখন ঢাকাবাসীর এমন একজন লোক পাবেন না যে বা যিনি বলবেন মেট্রোরেল প্রকল্প ঠিক হয় নি। বললে ”মাথা ফাটিয়ে” দেবে। বরং বলা হচ্ছে আরও আগে কেন করা হলো না? আর পুরো ঢাকা শহরটাই মেট্রোরেলের আওতায় আনার দাবি ওঠছে। 

অর্থাৎ সাধারণ মানুষ এখন বলছে এই মেট্রোরেল এক অসাধারণ কাজ হয়েছে। গত পঞ্চাশ বছরে রাজধানী ঢাকাকে তিলোত্তমা বানানোর নামে সব ”ভগিচকি” হয়েছে। পরিকল্পিত কোনো কাজ হয় নি। না রাস্তাঘাট, না ভবন নির্মাণ, না আবাসিক এলাকা নির্মাণ। সবকিছুই গড়ে ওঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। ৫০ বছরে রাজধানীর ট্রাফিক সিস্টেমটা পর্যন্ত ঠিক করা যায় নি। ট্রাফিক সিগনাল লাল হলুদ বাতির কতো প্রকল্প করা হলো, ডিজিটালের নামে কতো সিস্টেম চালু করা হলো।  কিন্তু কোনোটাই টিকলো না বা কার্যকর হলো না। ফলে এই প্রযুক্তি বা এ আইর যুগে এখনো হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করা হয় রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে নাকাল হতে হয়। কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।

এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিচ্ছে মেট্রোরেল। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের সবচেয়ে বড় ম্যাজিক। মেট্রোরেলের অন্য প্রকল্পগুলোর কাজও শুরু হয়ে গেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সাভার থেকে শুরু করে পুরো রাজধানী আর নতুন শহর পূর্বাচল চলে আসবে মেট্রোরেলের আওতায়। তখন এই রাজধানী ঢাকা হবে উন্নত দেশগুলোর মতো একটি আধুনিক রাজধানী শহর। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই এটা সম্ভব হবে। 

শংকর মৈত্র: সিনিয়র সাংবাদিক।  

ওআ/ আই.কে.জে/


সুখবর

খবরটি শেয়ার করুন