ছবি: সংগৃহীত
রমজান মাস শুরুর আগেই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রমজান ও ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটি মিলিয়ে দীর্ঘ সময়ের এ ছুটি। বছরের প্রায় আড়াই মাস পার হতে চললেও এখনো সব পাঠ্যবই হাতে আসেনি। প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নামমাত্র দুই-তিনটি করে পাঠ্যবই দেওয়া হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও সব বই পায়নি।
প্রাথমিক পর্যায়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী বই পায়নি। এর মধ্যেই তাদেরকে দীর্ঘ ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটির পর যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হবে, সেসব প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হতে মে মাস পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।
সে হিসাবে তাদের টানা ৭০ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়তে হবে। দেরিতে বই পাওয়া ও দীর্ঘ ছুটির কারণে নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস শেষ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
দেশের সাধারণ শিক্ষাক্রমের আওতাধীন প্রায় সব শিক্ষার্থীকেই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, কারিকুলাম পরিবর্তন ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কারণে এ বছর শিক্ষার্থীরা জানুয়ারিতে সব বই হাতে পায়নি। ফলে তারা নিশ্চিতভাবেই শিখন ঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিগত এক বছরের ছুটির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত মোট কর্মদিবস ছিল ২৬১ দিন। এর মধ্যে ছুটিতেই কেটে যায় ১১০ দিন। সে হিসাবে প্রায় অর্ধেক কর্মদিবসই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের সন্তানদের কোচিংয়ে ক্লাস করিয়ে শিখন ঘাটতি কিছুটা পূরণ করা হয়। তবে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
এদিকে সাধারণ শিক্ষাক্রমের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো (প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ) ছুটি থাকলেও বিপরীত চিত্র দেশের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কিন্ডার গার্টেনগুলোয়। দেশের প্রায় সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কিন্ডার গার্টেনগুলোয় পাঠদান চলছে। এসব স্কুলে ১৮-২০ রোজা পর্যন্ত পাঠদান চলবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সময় কমিয়ে আনা হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষাক্রমে একের পর এক বিরতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় ধরনের শিখন ঘাটতি তৈরি করছে এবং সামাজিক বৈষম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সমাজে যারা বিত্তবান, তারা সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমে ও কিন্ডার গার্টেনে পড়াচ্ছেন, কোচিং-টিউশনের ব্যবস্থা করছেন। সাধারণ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কিন্ডার গার্টেনগুলোয় পাঠদান চলছে এবং সময়ের সঙ্গে সেগুলো এগিয়ে যেতে পারছে। কিন্তু পিছিয়ে থাকছে নিম্নবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরিবারের শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। কেননা, বছরের প্রথম দুই-তিন মাস ভালো ক্লাস না হলে পরবর্তী সময়ে সংকট আরো বাড়তে পারে। প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। ছুটির মধ্যে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ঠিক রাখতে সরকারের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, যা দেওয়া হয়নি।
বর্তমানে শিক্ষাপঞ্জিতে যেভাবে ছুটি রয়েছে, সেক্ষেত্রে সংশোধন দরকার।দেখা যায়, আবহাওয়া যখন সহনীয় থাকে, তখন বিদ্যালয় বন্ধ থাকছে।আবার যখন তীব্র তাপপ্রবাহ থাকে, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকে। তাই রমজানে যদি ছুটি দেওয়াও হয়, তাহলে বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
শিক্ষা নিয়ে একটি সম্বনিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ছুটি কমিয়ে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা হোক।
এইচ.এস/