ছবি: সংগৃহীত
বাংলা সাহিত্যের অনন্য ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন আজ পঁচিশে বৈশাখ। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্ম কালজয়ী এ কবির। আজ বিশ্বকবির ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী।
শতবর্ষ আগে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার রচনাবলীতে প্রকাশ করে গেছেন প্রেম, ভালোবাসা, প্রকৃতি, প্রার্থনার কথা। তুলে ধরেছেন সমাজ উন্নয়ন, বলে গেছেন রাষ্ট্রনীতি ও রাজনীতির তত্ত্বকথাও। যুগ, বছর, শতাব্দী পেরিয়ে যা আজও বর্তমান ও প্রাসঙ্গিক। বিশিষ্টজনরা বলছেন, কবিগুরুর সাহিত্যভান্ডার মানেই জ্ঞনের অপার সম্ভার, যার বসবাস মানবের মননে ও অনুভূতির সূক্ষ্মতায়।
প্রকৃতি-প্রেম আর ভালোবাসায় মানবমুক্তি খুঁজেছেন রবীন্দ্রনাথ। সৃষ্টির পরতে পরতে ছড়িয়ে দিয়েছেন ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় সংকট উত্তরণের পথ। তার সৃষ্টিকর্ম বিশ্বের কাছে নতুনভাবে পরিচয় করে দিয়েছে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে।
১৮৭৪ সাল, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম কবিতা অভিলাষ। সময়ের পরিক্রমায়, তার সাহিত্য ভান্ডার ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। আর তিনি হয়ে উঠেন বিশ্বকবি।
কবিতা, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, ভ্রমণকাহিনি, সংগীত, শিশুসাহিত্য-নানা শাখায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান অতুলনীয়। চিত্রকলাকেও তিনি সমৃদ্ধ করে গেছেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাঁর অবদান যুগান্তকারী।
রবীন্দ্রভূমির এক ভাগ কাব্য আর তিন ভাগ গদ্য। চিন্তা ব্যাখ্যা বাস্তববোধ তার প্রতিভার বুনিয়াদ; সেই মাটি থেকে উঠে আকাশ ছুঁয়েছে তার কল্পনা, ভাবাদর্শ, বিশ্বচেতনা। জীবন ও জগদ্বেদনার আলোয় কবির চিত্ত উদ্ভাসিত হয়ে সত্যের সুন্দর ভাষ্য রচনা করেছেন সংগীতে। কত অসাধারণ সব গান রচনা করেছেন তিনি! এক আশ্চর্য ক্ষমতা রবীন্দ্রসংগীতের। দেখা গেল সাধারণ মানুষ, যার জীবন হতদরিদ্রের নিঃস্বতায় জর্জরিত নয়, একটুখানি মানবিক সুবাতাস গ্রহণের সামান্য অবকাশটুকু আছে, সে যেন রবীন্দ্রনাথের গানে ঠিকই তার মনের পুষ্টি পেয়ে যায়।
বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেন, ‘বাংলার পথে, ঘাটে, হাটে, মাঠে, এমনকি সুদূর নিভৃত পল্লির ঘরে প্রাঙ্গণে তাহার গানের সুর বাজিয়া উঠিতেছে।’ কারণ তিনি জানেন, ‘রবীন্দ্রনাথ খাঁটি বাঙালি কবি। রবীন্দ্রনাথের যে সত্যকার কবি-মূর্তি, তাহা সেই বাংলার বৈষ্ণব কবিরই প্রতিচ্ছবি। ’
আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। তার গান ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর রচনা বাঙালিকে প্রেরণা জুগিয়েছে।
বাঙালির পরম আরাধ্য এই মহাত্মার জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয়। সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রবীন্দ্রদর্শনের প্রধান বিষয় হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। তাকে (রবীন্দ্রনাথ) জীবনমুখী শিক্ষাদর্শনের পথপ্রদর্শকও বলা যায়। তিনি শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সব সময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন।’
এসি/ আই.কে.জে/