ছবি: সংগৃহীত
মাসুদ কামাল
গত বৃহস্পতিবারের (১৫ই মে) কথা। রাত তখন সাড়ে ১১টা। আমার এক গুরুজন ফোন করলেন। বললেন—‘যমুনা টিভি (ঢাকার বেসরকারি টিভি চ্যানেল) দেখছ? ওখানে তো শফিকুল আলম (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব) তোমাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।’ সে রাতে আর সময় পাইনি। পরের দিনও না।
আসলে কতজনই তো আমাকে চ্যালেঞ্জ করেন, গালাগাল করেন, আবার কেউ কেউ প্রশংসাও করেন। একজন মানুষের পক্ষে সব দেখা, প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা কঠিন। অনুষ্ঠানটা আজ (শনিবার, ১৭ই মে) দেখার সুযোগ পেলাম।
আমার ইউটিউব চ্যানেল ‘কথা’তে আমি একটা কনটেন্ট করেছিলাম। দ্বৈত নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা উচিত কী না—তা নিয়ে। শফিকুল আলম সাহেব সেটা নিয়েই কথা বলেছেন। দুর্ভাগ্য আমার, সে অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম না।
অবশ্য থাকার কোনও সুযোগও ছিল না। কারণ, ইদানীং প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাহেব টেলিভিশনগুলোতে অন্য কোনো আলোচকের সঙ্গে আর যান না। আগে যেতেন, এখন যান না। এখন একা একা হলেই কেবল যান। টিভিগুলোকে নাকি এ রকম শর্তই দেওয়া হয়।
এতে অবশ্য আমি বিস্মিত হইনি। হাসিনা সরকারের (গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ই আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত) সবশেষ প্রেস সেক্রেটারি নাইমুল ইসলাম খানও (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব ও সাংবাদিক) এ রকম শর্তসাপেক্ষে টিভিতে কথা বলতেন। আগে সকলের সঙ্গেই বসতেন। কিন্তু সরকারি দায়িত্ব পাওয়ার পর শর্ত প্রয়োগ শুরু করেন।
এটা হয়। কারও যখন নিজের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে যুক্তি কমে যায়, আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে, তখন তারা একা একা বলতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। কে চায়—অন এয়ারে নাস্তানাবুদ হতে? যা হোক, কী আর করা।
এর একটা জবাব বোধকরি দেওয়া দরকার। আমাকে নিয়ে উনি (প্রেস সচিব শফিকুল আলম) যা বলেছেন, ভাবছি সেটা নিয়ে আমি ভিন্ন একটা ভিডিও করব। এখানে আমি বরং ওই অনুষ্ঠানের অন্য একটি অংশ নিয়ে কথা বলি।
বন্দর ইজারা, রাখাইনদের মানবিক করিডর দেওয়া ইত্যাদি প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের অ্যাংকর রোকসানা আনজুমান নিকোল জানতে চাইলেন, এসব কাজ করার ম্যান্ডেট এই সরকারের (নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার) আছে কী না। জবাবে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার শফিকুল আলম বললেন, ‘উই গট ম্যান্ডেট টু ডু এভরিথিং।’
নিকোলকে বিস্মিত মনে হলো। উনি জানতে চাইলেন, ‘এভরিথিং?’ মি. আলম এবার আরও দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, ‘এভরিথিং। আমাদের প্রত্যেকটা কিছুর ম্যান্ডেট আছে। সংস্কার হচ্ছে আমাদের মেইন ম্যান্ডেট, এবং সংস্কারে সবকিছু পড়ে।’ আমিও বিস্মিত! হতবাক! এভরিথিং?
একজন সরকারি কর্মচারী এই ভাষায় কথা বলতে পারেন? নাকি এটাও সেই ‘এভরিথিং’ আর ‘সংস্কার’ এর মধ্যেই পড়ে? আচ্ছা, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার তো বিদায় হয়েছে। আসলেই হয়েছে কি?
লেখক: সাংবাদিক ও টকশো তারকা।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন