শনিবার, ১১ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** গাজা উপত্যকায় উল্লাস, বেদনাকে সঙ্গী করে ঘরে ফেরা উদ্‌যাপন *** সব উপদেষ্টাই তো বিদেশি নাগরিক: রুমিন ফারহানা *** ইরানের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কবলে বাংলাদেশমুখী এলপিজির জাহাজ *** চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে গুজব, যা বললেন ছেলে জয় *** ফ্যাসিস্ট বুদ্ধিজীবীরা সব সময় ধর্ম পালনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করেন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা *** বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি প্রদর্শনসংক্রান্ত অনুচ্ছেদ সংবিধান থেকে বিলুপ্তি চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন *** ‘কারা লুঙ্গি তুলে চেক করে মানুষ মেরেছে, তা সবারই জানা’ *** শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়া মাচাদোকে অভিনন্দন জানালেন ড. ইউনূস *** শনিবার ভোরে দেশে ফিরছেন শহিদুল আলম *** ইসরায়েল থেকে মুক্ত শহিদুল আলম এখন তুরস্কে

‘সংস্কৃতি ও ভাষার অবিনশ্বর এক অবস্থান একুশের বইমেলা’

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৬:০১ অপরাহ্ন, ২৯শে জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

অজয় দাশগুপ্ত বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, ছড়াসাহিত্যিক ও প্রগতিশীল লেখক। বাংলা ছড়া সাহিত্যে অনিবার্য নাম তিনি। ছড়া সাহিত্যে তিনি পাঠকনন্দিত। কয়েক দশক ধরে লিখলেও তার প্রকাশিত ছড়ার বই হাতেগোণা। সাহিত্যবোদ্ধারা মনে করেন, এ ক্ষেত্রে অজয় দাশগুপ্ত প্রয়াত লেখক ওয়াহিদুল হক, কবি আবুল হাসান ও হেলাল হাফিজের অনুগামী। তাদেরও বইয়ের সংখ্যা কম। অজয় দাশগুপ্ত থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। তবে নিয়মিত লেখালেখির মাধ্যমে তার নিত্য বসবাস বাঙালি পাঠকের হৃদয়ে। মননে।

একসময় প্রায় প্রতিদিনই তার উপস্থিতি থাকতো দেশের জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে। কবিতা, গদ্য, বিশেষ করে গুণী বাঙালিদের স্মরণ করা স্মৃতিগদ্য লেখায় তিনি নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে অমর একুশে বইমেলাকে কেমন দেখতে চাচ্ছেন, আয়োজক বাংলা একাডেমির কাছে প্রত্যাশা, সর্বাঙ্গীণ সুন্দর মেলার আয়োজনে পরামর্শসহ নিজের নতুন বই সম্পর্কে তিনি কথা বলেছেন সুখবর ডটকমের সাথে। মুঠোফোনে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুখবরের বিশেষ প্রতিবেদক

অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘এবারের একুশের বইমেলা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, এবার অনেক বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে এবং আরো আসবে। মুশকিলটা হচ্ছে, বিগত সরকারের বিদায় যেমন বিষয়, তেমন বিষয় হচ্ছে নতুন যারা মাঠ দখলে নিলেন, তাদের ভূমিকা। একুশের বইমেলা মূলত সংস্কৃতি ও ভাষার এক অবিনশ্বর অবস্থান। একে রাজনীতিমুক্ত রাখা আবশ্যক হলেও তা হয়নি। প্রশ্ন উঠতে পারে, একুশের ভাষা আন্দোলন তো নিজেই এক রাজনীতি। বাঙালির রাজনৈতিক চেতনা আর বাঙালিত্বের অভ্যুদয়ের স্মারক। একে রাজনীতিমুক্ত রাখা কি সম্ভব? উত্তর হচ্ছে, না। কিন্তু বইমেলাকে দলীয় বা ঘোর আদর্শিক যে কোনো রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখা ছিল অনিবার্য। যা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এই না হওয়ার পেছনে অনেক কারণের ভেতর একটি ছিল কর্তৃত্ববাদীতা। এই কর্তা-কর্ত্রীর আদেশ-নির্দেশ আর তাদের প্রভাববলয় আমাদের একুশের বইমেলাকে নানাভাবে বিপদের মুখে ফেলেছিল। এখন সে বিপদ যদি নতুন নামে, নতুন পরিচয়ে আর নব আঙ্গিকে ফিরে আসে, তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। আমি ব্যক্তিগতভাবে অবাধ, খোলামেলা, আদর্শ-অনাদর্শের সীমানা পেরুনো একটি চমৎকার বইমেলা দেখতে চাই। যার একটি ছোট অংশ মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা বা যে কোনো মুক্তির লড়াইয়ের সঙ্গে আপোস করবে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আমাদের দেশের এবং বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রাণের জায়গা। এর ইতিহাস ঐতিহ্য আর ভবিষ্যত আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলা একাডেমির পদক, পুরস্কার বহুলাংশে বিতর্কিত হওয়ার পরও মানুষ এই পুরস্কারের ওপর আস্থা রাখতে ভালোবাসতো। কিন্তু এ বছর স্থগিত পুরস্কার প্রক্রিয়া পুরো বিষয়টিকে একটি নাজুক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। এটা মনে করার একশ একটি কারণ থাকতে পারে যে, প্রক্রিয়ায় গলদ ছিল বলে তা স্থগিত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি স্টল বরাদ্দ বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বেলায় নিরপেক্ষ থাকুক বা থাকবে, এটাই আমাদের চাওয়া। একাডেমির কাছে প্রত্যাশা খুব সাধারণ, কাউকে অকারণে অপমান, হেনস্থা বা বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া না হোক। অবারিত মাঠে গণললাটের মতো উদার ও প্রশস্ত হোক আয়োজন।’

কলাম লেখক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘সুন্দর মেলা তখনই হবে, যখন আমাদের মন-মানসিকতা কলুষমুক্ত হবে আর সুন্দর থাকবে। এই থাকা বা থাকার ইচ্ছে থেকে সব ধরনের পছন্দ-অপছন্দের সীমাবদ্ধতা বাদ দিতে পারলে সুন্দর মেলা করা সম্ভব। জাতি হিসেবে আমাদের যেসব অর্জন, যেসব অধিকার ও প্রাপ্তি, তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং যে কোনো দলাদলির বাইরে বিরাজিতমুক্ত সমাজের মতো আচরণেই সম্ভব হবে নিরাপদ ও প্রাণবন্ত বইমেলার আয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকাকেন্দ্রিক বইমেলাকে আমরা জাতীয় বইমেলা বলে থাকি। এর মানে এই নয় যে, আমাদের ছোট দেশটির বাকি শহর বা জেলাগুলো মফস্বল। আপনি যদি তাকান তো দেখবেন, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী-এমন সব বড় শহরেও বইমেলা হয়। সেসব মেলায় মানুষের ঢল, বইপুস্তক কেনাবেচা বা প্রকাশনার মান ও সংখ্যা- কম কিছু নয়। সবকিছু এককেন্দ্রিক হলে তাকে যেমন স্বাস্থ্য ভালো বলা যায় না, তেমনই শুধু রাজধানী কেন্দ্রিকতাও স্বাস্থ্যকর হতে পারে না।’  

তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমি চাইলে ঢাকার বাইরে মেলার আয়োজন করতে পারে। তাদের যে নেটওয়ার্ক, তাকে সচল রেখে ঢাকার বাইরের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলাপ করে এমন মেলা করা সম্ভব। অবকাঠামোগতভাবে সফল ও স্বাবলম্বী দেশের শহর-বন্দরগুলোয় মেলা করলে বাংলা একাডেমিরই লাভ। তাদের কাজ হবে যোগাযোগ ও নিজেদের সদিচ্ছা জানানো। আমার মনে হয়, তাতেই এ কাজ করা সম্ভব।’

তিনি জানান, ‘‘এবারের একুশের বইমেলায় আমার একটি মাত্র প্রবন্ধের বই প্রকাশের আশা করছি। অনন্যা থেকে 'আমার যতো দূরাগত  ভাবনা’ বইটি বের হতে পারে। একটি ছড়া ও কিশোর কবিতার বইয়ের পুণ:মুদ্রণেরও কথা আছে।’

হা.শা/কেবি


অমর একুশে বইমেলা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250