চীনের এই অঞ্চলটি পরিচিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্যাসিনো হাব হিসেবে। ছবি: ম্যাকাও নিউজ
এশিয়ার ‘লাস ভেগাস’ নামে পরিচিত চীনের ম্যাকাও। ২০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রমোদ নগরী লাস ভেগাসকে হারিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম জুয়া কেন্দ্র পরিচয়টি নিজের করে নেয় ম্যাকাও। খবর বিবিসির।
জুয়া, ভোজন বিলাস, বিনোদন ও নৈশ-প্রমোদে জমজমাট এই আলোকিত নগরী। চীন, হংকং ও এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে এ পাড়ায় ভীড় লেগে থাকে পর্যটকদের। প্রতি বছর ম্যাকাও ভ্রমণে যান প্রায় ৪ কোটি পর্যটক।
বিশের দশকের শুরুর দিকে ম্যাকাওয়ে জুয়া শিল্পের উত্থান হয়। ১৯৯৯ সালে সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশটি চীনের নিয়ন্ত্রণে ফেরার পর আন্তর্জাতিক ক্যাসিনো অপারেটরদের জন্য তাদের বাজার উন্মুক্ত করে দেয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তবে এবার যেন চীনের পরিকল্পনা ভিন্ন। ক্যাসিনো ম্যাকাওয়ে এবার চীন বানাতে চাচ্ছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসাকেন্দ্র।
চীনের এই পরিকল্পনার পেছনে রয়েছে কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা। সে সময় ম্যাকাওর ক্যাসিনোগুলো বন্ধ হয়ে গেলে রাজস্ব আয় একেবারে শূন্যে নেমে আসে। সে অর্থনৈতিক ক্ষতি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। জুয়া নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি ও ইভেন্ট-এর মতো শিল্পগুলোর দিকে ঝুঁকছে চীন।
এই সপ্তাহে ম্যাকাওতে উদ্বোধন হয়েছে একটি ‘রিসোর্ট হাসপাতাল’। যেখানে মিলবে হেলথ স্ক্রিনিং, আধুনিক স্ক্যান ও কসমেটিক সার্জারির মতো উন্নত ও বিলাসবহুল চিকিৎসা সেবা। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বেইজিংয়ের উদ্যোগে ম্যাকাওর অর্থনীতিকে বহুমুখী করার প্রচেষ্টার অংশ।
এই রিসোর্ট হাসপাতাল-এর উদ্যোগে জড়িত আছে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আইর্যাড হাসপাতাল। স্টুডিও সিটিতে হংকং-ভিত্তিক একটি গ্রুপের মালিকানাধীন হলিউড-থিমযুক্ত ক্যাসিনো ও বিনোদন কেন্দ্রে নতুন এই রিসোর্ট হাসপাতাল হতে যাচ্ছে। হাসপাতালটি আশা করছে, উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেলে ভ্রমণকারীরা এখানে আরও বেশি সময় কাটাবেন এবং ব্যয়ও করবেন।
ম্যাকাওয়ের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার চাপ আসছে একেবারে শীর্ষ মহল থেকে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ম্যাকাওতে ‘অর্থনীতি বহুমুখীকরণ’ ও ‘আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক নতুন শিল্প’ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন।
হংকংয়ের বিপরীতে, যেখানে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন বেইজিংয়ের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল, ম্যাকাওর সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে অনেক মসৃণ ও সহযোগিতাপূর্ণ।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি বদলেছে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ম্যাকাওয়ের ওপর বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ এখন আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নতুন আইন অনুযায়ী কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় সর্বশেষ আইনসভা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
২০২৩ সালের শুরুর দিকে ম্যাকাওয়ের অন্যতম বড় জুয়া ব্যবসায়ীকে সংগঠিত অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কয়েক মাস পরই বিদেশি হস্তক্ষেপ ও বেইজিংবিরোধী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে নতুন নিরাপত্তা আইন কার্যকর হয়।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন