সোমবার, ৭ই এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাল্টা শুল্ক স্থগিতের অনুরোধ করে ট্রাম্পকে চিঠি প্রধান উপদেষ্টার

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৩৭ অপরাহ্ন, ৭ই এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার (৭ই এপ্রিল) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। চিঠিতে তিনি আমেরিকার পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশে শুল্ক সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস তার চিঠিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ আমেরিকার বাণিজ্যিক লক্ষ্য পূরণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি একজন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, আমেরিকার পণ্যের জন্য ১৭ কোটি মানুষের ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশি বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির আগ্রহের কথা জানানো। বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে এ ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছিল।

অধ্যাপক ইউনূস আরও জানান, বাংলাদেশই প্রথম আমেরিকা থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। আমেরিকা এলএনজি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ এ খাতে আরও সহযোগিতার পথ খুঁজছে।

তিনি বলেন, তখন থেকেই বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আমেরিকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে মার্কিন পণ্যের রপ্তানি দ্রুত বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে কাজ করে যাচ্ছেন। এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করবেন।

অধ্যাপক ইউনূস চিঠিতে উল্লেখ করেন, তাদের প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো আমেরিকা থেকে কৃষিপণ্য—বিশেষ করে তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো, যা আমেরিকা কৃষকদের আয় ও জীবিকার জন্য সহায়ক হবে। আমেরিকার তুলা দ্রুত বাজারে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি বিশেষ শুল্কমুক্ত সংরক্ষণাগার (বন্ডেড ওয়্যারহাউস) চালু করার কাজ চলছে।

তিনি আরও জানান, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমেরিকার অধিকাংশ পণ্যের ওপর বাংলাদেশে শুল্কহার সবচেয়ে কম। উপর্যুক্ত কৃষিপণ্য ও স্ক্র্যাপ ধাতুর ওপর শুল্ক শূন্য রাখার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। পাশাপাশি গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো শীর্ষ আমেরিকার রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ কমানোর কাজ চলছে।

অধ্যাপক ইউনূস বিভিন্ন অশুল্ক বাধা দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কথাও উল্লেখ করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কিছু পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া, প্যাকেজিং, লেবেলিং ও সনদ-সংক্রান্ত নিয়ম সহজতর করা এবং কাস্টমস ও মান নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরও সহজ করা।

তিনি জানান, বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এ অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে আমেরিকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অ্যাডভান্সড টেকনোলজি, সিভিল এভিয়েশন, প্রতিরক্ষা খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারবে।

অধ্যাপক ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেন যে, এ উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন চলতি ত্রৈমাসিকের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। এ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আমেরিকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিনি সামান্য সময় প্রার্থনা করেন। তাই তিনি বিনীতভাবে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আমেরিকার পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান।

চিঠির শেষে অধ্যাপক ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সদয় সম্মতি প্রত্যাশা করেন এবং তার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

এইচ.এস/

প্রধান উপদেষ্টা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন