বৃহস্পতিবার, ৯ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** রাজশাহীতে আ.লীগ নেতার তিন ছেলে-মেয়ের জামিন *** খাগড়াছড়িতে ধর্ষণ ও হামলার ঘটনায় আজ তথ্যানুসন্ধান দল পাঠাচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি *** শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ভিসা জটিলতা দূর করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার *** ৭ বছর পর জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে খালেদা জিয়া *** একাধিক দেশের পাসপোর্টধারী ও নাগরিক বলে কাকে ইঙ্গিত করলেন উপদেষ্টা *** তেজগাঁওয়ে হোলি রোজারি চার্চের সামনে বুধবার যা ঘটল *** ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান বন্ধের চেষ্টা, পুলিশের হস্তক্ষেপ *** দুদকের মামলার আসামি হওয়ার একদিন পর ট্রাইব্যুনালের ‘বিচারক’ *** ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের বক্তব্য ‘অযৌক্তিক’: তৌহিদ হোসেন *** ১৫–১৮ই নভেম্বরের মধ্যে গণভোট সম্ভব, হিসাব দিলেন জামায়াত নেতা তাহের

কাশির সিরাপের প্রতি ভারতীয়দের আসক্তি যে কারণে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:১৬ অপরাহ্ন, ৯ই অক্টোবর ২০২৫

#

সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে মধ্যপ্রদেশের ছোট এক শহরে একের পর এক শিশুর মৃত্যুর খবরে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এক মাসের মধ্যে ২০ শিশুর মৃত্যু, যাদের সবার বয়স এক থেকে ছয় বছর, তাদের সবাই একটি সাধারণ কাশির সিরাপ খেয়েছিল।

ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে পানীয় জল পরীক্ষা থেকে শুরু করে এর জন্য মশা দায়ী কি না—সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেছিলেন কর্মকর্তারা। তারপর জানা যায়, ওই শিশুদের কিডনি ফেল করেছিল। খবর এএফপির।

এর কয়েক সপ্তাহ পরে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চেন্নাইয়ের একটি সরকারি পরীক্ষাগার যে বিষয়টি নিশ্চিত করে, তা ছিল আরও ভয়াবহ। পরীক্ষাগারে পাঠানো সিরাপের নমুনায় পাওয়া যায় ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল—একটি বিষাক্ত রাসায়নিক, যা কোনো ওষুধে থাকা নিষিদ্ধ। এই রাসায়নিক গ্রহণে সাধারণত কিডনি অকেজো হয়ে যায়।

ভয়াবহতা এখানেই শেষ নয়। পাশের রাজ্য রাজস্থানে দুই শিশুর মৃত্যু হয় স্থানীয়ভাবে তৈরি ডেক্সট্রোমেথরফ্যান সিরাপ খাওয়ার পর—যা অল্পবয়সী শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

তবে ভারতের জন্য এটি কোনো নতুন ঘটনা নয়। বিগত কয়েক বছরে ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল মেশানো কাশির সিরাপে মারা গেছে অসংখ্য শিশু। ২০২৩ সালে এমন সিরাপের কারণে গাম্বিয়ায় ৭০ শিশু এবং উজবেকিস্তানে ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৯ সালের শেষ থেকে ২০২০ সালের শুরুর মধ্যে জম্মুতে অন্তত ১২ শিশুর মৃত্যু ঘটে একই কারণে।

প্রতিবারই এমন দুর্ঘটনার পর দেশজুড়ে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি আসে, কিন্তু কিছুদিন পর আবারও বাজারে ফিরে আসে সেই সিরাপ। কারণ, দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এখনো দুর্বল, জটিল ও খণ্ডিত। শত শত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উৎপাদক অনুমোদন ছাড়াই বাজারে সিরাপ বিক্রি করছে, যার বড় অংশই প্রেসক্রিপশন ছাড়া সহজলভ্য।

সাম্প্রতিক মৃত্যুর পর ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসকদের সতর্ক করে জানিয়েছে, শিশুদের ক্ষেত্রে এসব ওষুধ ‘যুক্তিসংগত ব্যবহার’ করতে হবে। সিরাপের নমুনা জব্দ, বিক্রি স্থগিত ও তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যা শুধু অতিরিক্ত প্রেসক্রিপশন নয়, বরং গোটা ওষুধ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার অকার্যকারিতা। মার্কেট রিসার্চ ফিউচারের হিসাবে, ভারতের কাশির সিরাপের বাজার ২০২৪ সালের ২৬২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩৫ সালে ৭৪৩ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। অর্থাৎ বছরে প্রায় ১০ শতাংশ হারে বাড়বে।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই বাজার বাড়বে কেন? ভারতীয়রা কি কাশির সিরাপের আসক্ত? কাশির সিরাপকে সাধারণত ‘দ্রুত আরামদায়ক সমাধান’ হিসেবে বাজারজাত করা হয়। এগুলোতে চিনি, রং ও ঘ্রাণের সঙ্গে বিভিন্ন অ্যান্টিহিস্টামিন, ডিকনজেস্ট্যান্ট ও এক্সপেকটোরেন্ট মেশানো হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, কেউ কফ শুষ্ক করতে, কেউ কফ ঢিলা করতে, কেউ আবার কাশি দমন করতে এই সিরাপ ব্যবহার করে। কিন্তু বাস্তবে এসব সিরাপ বেশির ভাগ সময় সামান্য আরাম ছাড়া তেমন কোনো চিকিৎসাগত ফল দেয় না।

মুম্বাইয়ের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রাজারাম ডি খারে বলেন, ‘বেশির ভাগ শিশুর কাশি হয় ভাইরাসের কারণে, যা এক সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজে সেরে যায়। কোনো সিরাপ এতে তেমন প্রভাব ফেলে না। মাঝে মাঝে ঘুমের সমস্যা হলে আমি হালকা সিরাপ দিই, শুধু আরামের জন্য।’

এর বড় কারণ, ভারতের প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা—বিশেষ করে ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে। দূষণ ও ধুলাবালির কারণে ক্রমবর্ধমান কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যার চিকিৎসায় এসব সিরাপ ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।

আরও বড় সমস্যা হচ্ছে, তথাকথিত গ্রামীণ চিকিৎসক বা আরএমপিরা। তারা আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ ছাড়াই চিকিৎসা দেন। দেশের গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রাথমিক চিকিৎসা তাদের হাতেই হয়।

পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ ও সাবেক ড্রাগ এক্সিকিউটিভ দিনেশ ঠাকুর বলেন, গ্রামের মানুষ স্থানীয় দোকানদার বা তথাকথিত চিকিৎসকদের কাছেই যান, ধরে নেন, তারা ফার্মাসিস্ট। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশই প্রশিক্ষণবিহীন। শুধু গ্রাম নয়, বড় শহরেও একই প্রবণতা দেখা যায়। পার্থক্য শুধু, শহরে ওষুধের মান কিছুটা ভালো।

আরও একটি কারণ, উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের চাপ। উত্তর প্রদেশের শিশু বিশেষজ্ঞ কফিল খান বলেন, শিশুর কাশি বা ঠান্ডা কয়েক দিনে না কমলে বাবা-মায়েরা নতুন চিকিৎসক দেখেন, যিনি প্রায়শই এমন সিরাপ লিখে দেন।

কফিল খান জানান, অনেক এমডি (ডক্টর অব মেডিসিন) শিশুরোগ বিশেষজ্ঞও দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে অ্যামব্রোক্সল সিরাপ দেন, যা ফুসফুসে কফ জমিয়ে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

তিনি বলেন, এটি কফ ভাঙার জন্য তৈরি, কিন্তু দুই বছরের নিচের বাচ্চারা থুতু ফেলতে পারে না, ফলে শ্লেষ্মা ফুসফুসে চলে গিয়ে নিউমোনিয়া হয়। কিন্তু তবুও এটি প্রেসক্রাইব করা হচ্ছে।

তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কাশির সিরাপে কোডিন নামের একধরনের মাদক ব্যবহার করা হয়। এটি হালকা ওপিওয়েড শ্রেণির মাদক, যা উচ্চমাত্রায় নিলে উচ্ছ্বাস বা নেশার অনুভূতি দেয় এবং আসক্তির ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে বড়রা দীর্ঘদিন এই সিরাপ খেলে এতে আসক্ত হয়ে পড়েন।

জে.এস/

কাশির সিরাপ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250