ছবি: সংগৃহীত
একসময় দেশের বাজারে শুধু শীত মৌসুমেই শিম, টমেটো, লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার মতো সবিজগুলো পাওয়া যেত। এখন সারা বছরই লাউ, শসা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পালংশাক ও পুঁইশাক এসব শাকসবজি মিলছে। শাকসবজি কেবল বারো মাস উৎপাদনই হচ্ছে না, ফলনের পরিমাণও বেড়েছে।
গত এক দশকে শাকসবজি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১ কোটি টন, যা ভোক্তাদের সুষম খাদ্য গ্রহণ ও খাদ্য নিরাপত্তায় শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলছে। এ ক্ষেত্রে উন্নত জাতের বীজ মুখ্য ভূমিকা রেখেছে বলে অভিমত কৃষিবিশেষজ্ঞদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এক দশক আগে ২০১৫–১৬ অর্থবছরে দেশে মোট সবজির উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ টন। তা পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২০–২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৯৭ লাখ টন। পরের ৫ বছরে সবজি উৎপাদন আরও ৫৩ লাখ টন বাড়ে।
বদৌলতে সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে সবজি উৎপাদন ২ কোটি ৫০ লাখ বা আড়াই লাখ টনে উন্নীত হয়। অর্থাৎ গত এক দশকে শাকসবজি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১ কোটি টন।
বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে ভোক্তাদের মধ্যে সবজি খাওয়ার আগ্রহ ও সচেতনতা বেড়েছে, অন্যদিকে কৃষকেরাও মোটামুটি ভালো দাম পাওয়ায় আবাদ বাড়িয়ে চলেছেন। তারা দেশি–বিদেশি নতুন নতুন জাতের বীজ ব্যবহার করার ফলে সবজির ফলন গত দুই দশকে প্রায় ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমদানি করা অনেক জাতের সবজিবীজ আমাদের দেশে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন হচ্ছে। তাই এখন সারা বছর সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তরুণেরাও বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ জন্য ঋণও পাওয়া যাচ্ছে। প্রচুর বিনিয়োগ আসছে। সব মিলিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ বেড়েছে। অবার উৎপাদিত সবজির দামও ভালো। এগুলো আমাদের অনেক বড় অর্জন।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে সবজিবীজের বার্ষিক চাহিদা ৩ হাজার ৬০ টন। এর মধ্যে শীতকালে ১ হাজার ৭২৩ টন, আর গ্রীষ্মে ১ হাজার ৩৩৭ টনের চাহিদা থাকে। কিন্তু মোট চাহিদার বিপরীতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ সরবরাহ করা হয় মাত্র ১১৪ টন।
বেসরকারি কোম্পানিগুলো সরবরাহ করে ২ হাজার ৪৮৫ টন। অর্থাৎ সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মোট চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ বীজ সরবরাহ করে থাকে। বাকি ১৫ শতাংশ বা ৪৬১ টন বীজ কৃষকেরা নিজেদের ফলন থেকে সংগ্রহ করে থাকেন।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে বীজের বাজারের আকার আনুমানিক ৩ হাজার কোটি টাকার। যদিও একেক জাতের বীজ একেক দামের হওয়ায় এটার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন বলে জানান বীজ ব্যবসায়ীরা।
খবরটি শেয়ার করুন