বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহাকাশে গ্যালাক্সির সংঘর্ষের গোপন রহস্য এবার উন্মোচন হতে যাচ্ছে!

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:০১ অপরাহ্ন, ২৯শে নভেম্বর ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

মহাবিশ্বের এক বিরল এবং শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনায়, স্টিফান’স কুইনটেট নামে পরিচিত পাঁচটি গ্যালাক্সির গুচ্ছের ভেতর সংঘর্ষে সৃষ্টি হয়েছে এক অপ্রত্যাশিত শক্তিশালী মহজাগতিক শকওয়েভ। প্রায় ২৯০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের এই ঘটনা বিজ্ঞানীদের কাছে উন্মোচন করেছে মহাজাগতিক রহস্যের এক নতুন দিগন্ত।

স্টিফান’স কুইনটেট এবং সংঘর্ষের কারণ

১৯ শতকের ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী এদোয়ার্ড স্টিফানের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে স্টিফান’স কুইনটেটের। পাঁচটি গ্যালাক্সির এই গুচ্ছটি প্রাচীনকালে মহাবিশ্বের বিবর্তনের প্রমাণ বহন করে চলেছে। এই গুচ্ছের একটি গ্যালাক্সি, এনজিসি ৭৩১৮বি, প্রায় ৩.২ মিলিয়ন কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে চারটি প্রতিবেশী গ্যালাক্সির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই সংঘর্ষে সৃষ্টি হয়েছে এক প্রবল শক ফ্রন্ট, যা একটি জেট বিমানের শব্দতরঙ্গের মতো শোনা যায়। ‘মন্টলি নোটিসেস অব দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই ঘটনা গ্যালাক্সির গঠন এবং বিবর্তনের জটিল প্রক্রিয়া উন্মোচনে সাহায্য করতে পারে।

সংঘর্ষের প্রভাব এবং পর্যবেক্ষণ

সংঘর্ষের ফলে স্টিফান’স কুইনটেটের ভেতর একটি অতি বৃহৎ আন্তঃগ্যালাক্টিক প্লাজমা এবং গ্যাসের ধ্বংসাবশেষের মেঘ সৃষ্টি হয়। ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. মারিনা আর্নাউডোভা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গ প্লাজমাকে রি-এনার্জাইজ করেছে এবং এটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে আলোকিত হয়েছে। পাশাপাশি, এই সংঘর্ষের ফলে নতুন তারা গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে।’

আরো পড়ুন : মাত্র এক চার্জে একটানা ৫০ ঘণ্টা গান শুনতে পারবেন এই ইয়ারবাডে!

গবেষণা পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি

এই ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রথমবার ব্যবহার করা হয়েছিল উইলিয়াম হার্শেল টেলিস্কোপে স্থাপিত উইভ স্পেকট্রোগ্রাফ। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘর্ষের পরে সৃষ্ট গ্যাসের প্রবাহ, ধ্বংসাবশেষের ধারা এবং নতুন তারার গঠন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই পর্যবেক্ষণ গ্যালাক্সির গঠন এবং তাদের বিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে। মহাজাগতিক সংঘর্ষগুলোর প্রক্রিয়া এবং তাদের প্রভাব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত গবেষণার পথ খুলে দেবে এই তথ্য।

গ্যালাক্সির বিবর্তন সম্পর্কে নতুন ধারণা

স্টিফান’স কুইনটেটের এই সংঘর্ষ একটি বিরল ঘটনা হলেও, এটি মহাবিশ্বের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচুর সংঘর্ষের প্রতিফলন। মহাজাগতিক সংঘর্ষের মাধ্যমে গ্যালাক্সির গঠন এবং তারা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে মনে করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই সংঘর্ষের চূড়ান্ত প্রভাব বুঝতে কয়েক বিলিয়ন বছর সময় লাগতে পারে। তবে এই সংঘর্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মহাবিশ্বের তারকাখচিত গ্যালাক্সি এবং অন্যান্য মহাজাগতিক ঘটনাগুলোর পরস্পর সম্পর্কিত বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করবে।

মহাবিশ্বের জটিল প্রকৃতি উন্মোচন

স্টিফান’স কুইনটেটের এই সংঘর্ষ মহাবিশ্বের গতিশীল এবং অগোছালো প্রকৃতি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। এই ঘটনা কেবল গ্যালাক্সির বিবর্তন সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করছে না, বরং মহাজাগতিক প্রক্রিয়াগুলোর সঙ্গে তারার জন্ম এবং মৃত্যু, প্লাজমা এবং গ্যাসের ভূমিকা, এবং সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট প্রভাবগুলোর জটিল সম্পর্ক বোঝাতেও সাহায্য করছে।

গবেষণার ভবিষ্যৎ এবং সম্ভাবনা

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, স্টিফান’স কুইনটেটের মতো মহাজাগতিক ঘটনাগুলো গভীর পর্যবেক্ষণ মহাবিশ্বের জন্ম, গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে নতুন দিশা দেখাবে। এর পাশাপাশি, এই ধরনের পর্যবেক্ষণ মহাজাগতিক পদার্থবিজ্ঞান এবং মহাবিশ্বের বৃহৎ কাঠামোগুলোর গঠন সম্পর্কে নতুন তত্ত্বও উন্মোচন করতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংঘর্ষের আরও গভীর অধ্যয়ন, উন্নত প্রযুক্তি এবং নতুন আবিষ্কার মহাবিশ্বের রহস্যময় প্রকৃতিকে আরও বিশদে প্রকাশ করবে।

এই ঘটনা আমাদের জানিয়ে দেয়, মহাবিশ্ব একটি অবিরাম পরিবর্তনশীল এবং গতিশীল পরিবেশ। প্রতিটি সংঘর্ষ, প্রতিটি তরঙ্গ এবং প্রতিটি তারা আমাদের মহাজাগতিক ইতিহাসের জটিল গল্পের অংশ।

এস/ আই.কে.জে/

গ্যালাক্সি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন