শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে ১০টি আমলে রিজিক বাড়ে

ধর্ম ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৮:১৫ অপরাহ্ন, ৩০শে মে ২০২৪

#

প্রতীকী ছবি

সবাই চায় রিজিকের প্রশস্ততা। অভাব কখনও কখনও মানুষের ঈমান-আকিদাকেও দুর্বল করে দেয়। ইসলামে প্রাচুর্যতা ও ধনাঢ্যতাকে নিষেধ করা হয়নি। তবে প্রাচুর্যতা ও ধনাঢ্যতার সঙ্গে ইসলামের বেশ কিছু বিধান যুক্ত হয়। যা পালন করলে ধানাঢ্যতায় কোনো সমস্যা নেই। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক সাহাবি ধনী ছিলেন।

আয়-রোজগারের ক্ষেত্রে পরিশ্রমের পাশাপাশি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাঁর মহত্ত্বের স্বীকৃতি দেওয়ার শিক্ষাও দেয় ইসলাম। ফলে পরিশ্রমের সঙ্গে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথাও কোরআন-হাদিসে বিবৃত হয়েছে। এখানে ১০টি আমলের কথা তুলে ধরা হলো:

১. আল্লাহর ভয় ও ভরসা : কোনো বান্দা আল্লাহকে ভয় করলে এবং তাঁর ওপর পূর্ণ ভরসা করলে তিনি তার আয়-রোজগারে বরকত দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই।’ (সুরা তালাক: ২-৩)

২. তওবা-ইস্তিগফার : তওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে বান্দা রবের প্রিয় হতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার করে, আল্লাহ তার রিজিক বাড়িয়ে দেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, আল্লাহ তাকে সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং এমন উৎস থেকে তাকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করেনি।’ (মুস্তাদরাক)

৩. দান-সদকা : আল্লাহর পথে খরচ করলেও আয়-রোজগারে বরকত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা: ৩৯)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো, তাহলে তোমাদের জন্যও ব্যয় করা হবে।’ (বুখারি)

৪. করজে হাসানা : কারও প্রয়োজনে করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ প্রদান করলে তার আয়-রোজগারে বরকত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন। আর আল্লাহ সংকীর্ণ করেন ও প্রসারিত করেন এবং তাঁরই কাছে তোমাদের ফেরানো হবে।’ (সুরা বাকারা: ২৪৫)

৫. আর্তমানবতার সেবা : বিপদে-আপদে অসহায় মানুষের প্রতি সদয় হওয়া যেমন সামাজিক কাজ, তেমনি তা আয়-রোজগারে বরকত লাভেরও মাধ্যম। একদিন মুসআব ইবনে সাদ (রা.) যুদ্ধ জয়ের পর মনে মনে ভাবলেন, তিনিই বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্যের কারণে অন্যের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান। এমন প্রেক্ষাপটে মহানবী (সা.) তাঁকে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণেই তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়।’ (বুখারি)

৬. ইবাদতে মনোযোগ : সব ব্যস্ততা কমিয়ে আল্লাহর ইবাদতের জন্য সময় বের করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। ফলে বান্দার আয়-রোজগারে বরকত হয়। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদমসন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ব্যস্তমুক্ত হও। আমি তোমার অন্তর প্রাচুর্যে ভরিয়ে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরিয়ে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ (তিরমিজি)

৭. আল্লাহর জন্য ভ্রমণ : আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে তাঁর বিধান ভালোভাবে পালন করতে নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে গেলে আয়-রোজগারে বরকত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয়, তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর ওপর অবধারিত হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা নিসা: ১০০)

৮. বিয়ে : বিয়ে করা আল্লাহর নবীর সুন্নত। বিয়ে করলে বান্দার আয়-রোজগারে বরকত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে বিয়ে করেনি এমন নারী-পুরুষ এবং সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের তোমরা বিয়ে সম্পন্ন করো। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ (সুরা নুর: ৩২)

৯. দোয়া ও প্রার্থনা : আল্লাহ বান্দার ডাকে উত্তম সাড়াদানকারী। তাই আয়-রোজগারে বরকতের জন্য তাঁর কাছেই বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (সুরা মুমিন: ৬০)

১০. আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক : রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের খোঁজখবর নেওয়া, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখার কারণে আল্লাহ বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেন। মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কামনা করে যে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি ও মুসলিম)

এছাড়া আরো একটি আমল রয়েছে, যার জন্য ঘটা করে কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না, যা শুধু আন্তরিকভাবে প্রকাশ করলেই হয়। আর তা হলো শোকরিয়া তথা আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, (জেনে রাখো) নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন। (সুরা ইবরাহিম: ৭)

সুখ ও দুঃখ উভয় অবস্থায় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের কর্তব্য। মূলত আল্লাহর আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতাই বান্দার আয়-রোজগারে বরকত এনে দেয়।

ওআ/

আমল ধর্ম

খবরটি শেয়ার করুন