ছবি: সংগৃহীত
আমাদের মধ্যে অনেকের প্রায় সময় নাক খোঁটানোর অভ্যাস আছে। আপাতদৃষ্টে বিষয়টি খুব সাধারণ মনে হলেও গবেষকেরা বলছেন, নাক খোঁটানোর বিষয়টি মোটেও নিরাপদ নয়। বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত এক গবেষণায় নাক খোঁটার সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকির ‘ক্ষীণ কিন্তু সম্ভাব্য যোগসূত্রের’ কথা বলা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নাক খোঁটানোর সময় যদি ভেতরের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া খুব সহজে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। মস্তিষ্কে এদের উপস্থিতি এমন কিছু প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যা আলঝেইমারস বা স্মৃতিভ্রংশ রোগের লক্ষণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তবে এ গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এর মূল কারণ হলো, গবেষণাটি প্রাথমিকভাবে মানুষের ওপর নয়, ইঁদুরের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। তারপরও এ ফলাফল আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি। এটি আলঝেইমারস কীভাবে শুরু হয়—যা এখনো অনেকটাই রহস্য—তা বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল ‘ক্ল্যামাইডিয়া নিউমোনি’ নামে একধরনের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে পরীক্ষা চালান। এ ব্যাকটেরিয়া মানুষের ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে। জীবনের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের মস্তিষ্কে এ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
ইঁদুরের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, এ ব্যাকটেরিয়া অলফ্যাক্টরি স্নায়ু (যা নাকের ছিদ্রপথকে মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত করে) বেয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নাকের ভেতরের পাতলা টিস্যু বা ন্যাসাল এপিথেলিয়াম ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্নায়ুর সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়।
এর ফলে ইঁদুরের মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড-বিটা প্রোটিন বেশি পরিমাণে জমা হতে দেখা যায়। সংক্রমণ প্রতিরোধে এ প্রোটিন নিঃসৃত হয়। আলঝেইমারস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কেও এ প্রোটিনের প্লেক বা জমাট বাঁধা দলা প্রচুর পাওয়া যায়।
২০২২ সালের অক্টোবরে গবেষণাটি প্রকাশিত হওয়ার সময় গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্টিস্ট জেমস সেন্ট জন বলেন, ‘আমরাই প্রথম দেখিয়েছি, ক্ল্যামাইডিয়া নিউমোনি সরাসরি নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। সেখানে এটি এমন কিছু পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা দেখতে আলঝেইমারস রোগের ক্ষেত্রে সংঘটিত পরিবর্তনের মতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি ইঁদুর মডেলে এটি ঘটতে দেখেছি এবং এর প্রমাণ মানুষের জন্যও সম্ভাব্য ভীতিকর।’
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন