ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ থেকে আসা প্রথম পোপ ছিলেন হোর্হে মারিও বেরগোগলিও (১৯৩৬-২০২৫)। এ ছাড়া সেন্ট পিটারের সিংহাসনে নির্বাচিত প্রথম জেসুইটও ছিলেন তিনি। ক্যাথলিক চার্চের সংস্কারের পাশাপাশি পুরোনোকে ধারণ করায় তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। খবর বিবিসির।
পোপ ফ্রান্সিস ক্যাথলিক চার্চের পোপ হওয়ার পর অনেক কিছুই প্রথমবার করলেও কখনো চার্চের সংস্কার কার্যক্রম বন্ধ করেননি। এরপরও পুরোনোকে আঁকড়ে ধরা ঐহিত্যবাদীদের মধ্যেও তিনি সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের গুরুতর জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। এর আগে ইতালির রোমে একটি হাসপাতালে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলেছে তার।
ভ্যাটিকান জানিয়েছে, আজ সোমবার (২১শে এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ভ্যাটিকানে নিজ বাসভবন কাসা সান্তা মার্তায় মারা যান তিনি।
পোপ নির্বাচনের মুহূর্ত থেকে ফ্রান্সিস ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি সবকিছু ভিন্নভাবে করবেন। তিনি পোপের সিংহাসনে বসার পরিবর্তে দাঁড়িয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে কার্ডিনালদের গ্রহণ করেছিলেন। আর তাই ২০১৩ সালের ১৩ই মার্চ সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় আবির্ভূত হন পোপ ফ্রান্সিস।
বিলাসিতা ও জাঁকজমকের চেয়ে নম্রতার প্রতি জোর দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তাছাড়া একজন রসায়নবিদ হিসেবে স্নাতক হওয়ার আগে তরুণ বারগোগ্লিও একটি নাইটক্লাবে বাউন্সার এবং ফ্লোর সুইপার হিসেবে কাজ করেছিলেন। স্থানীয় একটি কারখানায় তিনি এস্থার ব্যালেস্ট্রিনোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন।
তিনি একজন প্রবীণ ধর্মগুরুর অনেক ফাঁদ এড়িয়ে সরল রুচির মানুষ হিসেবে খ্যাতি গড়েছিলেন। গাউন পরতে পছন্দ করতেন তিনি। বিমান যাত্রায় তিনি ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণ করতেন। তার ধর্মোপদেশে সামাজিক অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান পোপ ফ্রান্সিস।
এদিকে পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বজুড়ে ১.২ বিলিয়ন ডলারের চার্চগুলোর জন্য নতুন একটি নীতি তৈরি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দরিদ্রদের জন্য আমি একটা দরিদ্র চার্চই দেখতে চাই।’ সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের প্রতি মনোযোগ দিতে সরকারগুলোর ব্যর্থতার সমালোচনা করেন তিনি।
পোপ হিসেবে তিনি ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের সঙ্গে হাজার বছরের ফাঁটল দূর করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি অ্যাঙ্গিকানস, লুথারানস এবং ম্যাথোডিস্টদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টদের তার সঙ্গে শান্তি প্রার্থনায় যোগ দিতে রাজি করিয়েছিলেন।
ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীদের হামলার পর তিনি বলেন, ‘সহিংসতা দিয়ে ইসলামকে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। আমি যদি ইসলামিক সহিংসতার কথা বলি, তাহলে আমাকে ক্যাথলিক সহিংসতার কথাও বলতে হবে।’
পোপ ফ্রান্সিস একজন প্রাচীনপন্থী (ট্রাডিশনাল) ছিলেন। মৃত্যুদণ্ড, গর্ভপাত, জীবনের অধিকার, মানবাধিকার এবং পুরোহিতদের ব্রহ্মাচর্যের বিষয়ে তিনি ছিলেন আপোষহীন। সমকামী বিয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটি হবে বিধাতার পরিকল্পনা ধ্বংস করার একটি প্রচেষ্টা।’
২০১৩ সালে পোপ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি রোমে গর্ভপাতবিরোধী একটি মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। পোপ ফ্রান্সিস ‘গর্ভধারণের মুহূর্ত জন্ম না নেওয়া শিশুদের’ অধিকারের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কোভিড মহামারির সময়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পোপ ফ্রান্সিস সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে তার নিয়মিত উপস্থিতি বাতিল করেছিলেন। নৈতিক নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, টিকা দেওয়া একটি সার্বজনীন বাধ্যবাধকতা।
পোপ ফ্রান্সিস তার উত্তরাধিকারীর জন্য এমন একটি চার্চ রেখে গেছেন, যা অনেক বেশি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিমূলক। নির্বাচনের পরপরই তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদেরকে চার্চের নিজের জগতে জড়িয়ে থাকা আধ্যাত্মিক অসুস্থতা (স্পিরিচুয়াল সিকনেস) এড়াতে হবে।’
আরএইচ/
খবরটি শেয়ার করুন