শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাইসির আকস্মিক মৃত্যু দুর্ঘটনা না ষড়যন্ত্র!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৮:১৩ অপরাহ্ন, ২০শে মে ২০২৪

#

ইরানের মানুষের কাছে এই মুহূর্তে নির্মম শোকের খবর হলো তাদের প্রিয় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আর নেই। সোমবার সকালে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের পাহাড়ি ও তুষারাবৃত এলাকায় রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায় অনুসন্ধান দল। এর কিছুক্ষণ পরেই খবর আসে, রাইসি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানসহ হেলিকপ্টারে থাকা সবাই নিহত হয়েছেন। 

প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ মোখবারের নাম অনুমোদন করেছেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। তিনি দুই মাস এ দায়িত্ব পালন করবেন। আপাতভাবে আকস্মিক দুর্ঘটনার জেরেই রইসির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দেশটির নাম ইরান আর তার শত্রু দেশের নাম ইসরাইল বলেই যারা সন্দেহপ্রবণ, তারা এই দুর্ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন।

ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা এবং রয়টার্স জানিয়েছে, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ভেঙ্গে পড়ে পড়ে রইসিকে বহন করা কপ্টারটি। সেই সময় দুর্ঘটনাস্থলে ভারী বৃষ্টি এবং ঘন কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা খুব কম ছিলো বলে একাধিক মাধ্যমে জানা গেছে। তখনই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ওঠেছিলো, বাজে আবহাওয়ার খবর ইরানি কর্তৃপক্ষের কাছে থাকার কথা। এরপরও কেন রাইসিকে নিয়ে উড়ে গেলো হেলিকপ্টারটি?

প্রেসিডেন্ট রাইসির সফরসঙ্গীদের বহনে নিয়োজিত ছিলো তিনটি হেলিকপ্টার। এর মধ্যে যেটিতে রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, সেটিই দুর্গম পাহাড়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বিধ্বস্ত হয়। অন্য দুইটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছালেও, কেন রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সাথে এমন ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্র তা নিয়েও চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। 

আরো পড়ুন: ইরানে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর ইরানসহ ও ফিলিস্তিনপন্থী লাখো মানুষের আঙ্গুল এখন ইসরাইলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের দিকে। তাদের ষড়যন্ত্র মনে প্রশ্ন উঠেছ, এই দুর্ঘটনার সঙ্গে মোসাদের সম্পর্কে নেই তো? এই গোয়েন্দা সংস্থাটি কোন গুপ্ত কৌশল রচনা করে রাইসিকে হত্যা করলো কিনা, তাদের মনে উঠছে সে প্রশ্নও। ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইরান-ইসরাইল সম্পর্ক সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে।

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে সরাসরি ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনটির পক্ষই নেয় ইরান। ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়তে পশ্চিম এশিয়ায় লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের মতো দেশে প্রক্সি বাহিনী গড়ে তুলেছে তেহরান। আর এর পেছনে কার্যকরি ভূমিকা নিয়েছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। সম্প্রতি ইসরাইলের মাটিতে ইরানের প্রথম হামলার পেছনে রাইসি মূল ক্রীড়ানক ছিলেন বলে অভিযোগ আছে পশ্চিমাদের। 

রোববার প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আজারবাইজান সীমান্তে এক কর্মসূচি সেরে তেহরান ফিরছিলেন। পড়শি রাষ্ট্র হলেও আজারবাইজানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক সব সময়েই শীতল। এর পেছনে বড় কারণ ইসরাইলের সঙ্গে আজারবাইজানের। এমনকি দেশটির মোসাদকে সাহায্য করারও ইতিহাস রয়েছে। অসমর্থিত এক সূত্র জানাচ্ছে, দুর্ঘটনার দিন আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে নেমেছিলো একটি মার্কিন সামরিক বিমানও।

বিষয়টি মহা-কাকতালীয় ঘটনা হিসাবে দেখতে চাইছেন না অনেকে। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে ব্যস্ত। বলতে চাইছেন, ইসরাইলের মোসাদ আর আমেরিকার সিআইএ তো একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যদিও ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের যারা বিরোধী, তাদেরও কিছু যুক্তি রয়েছে। সেগুলোর একটি হলো, ইসরাইল বা মোসাদ অতীতে কখনও কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের উপর সরাসরি হামলা চালায়নি।

বরং চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে, শত্রু দেশের সামরিক পরিকাঠামো নষ্ট করা, কিংবা অর্থনৈতিক স্বার্থকে নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে মোসাদের বিরুদ্ধে। তবে ব্যক্তিটির নাম রাইসি বলেই অনেকে এই অলিখিত নীতিতে বদলের সম্ভাবনা দেখছেন। তাদের ধারণা, পরমাণূ কর্মসূচি এগিয়ে নেয়া এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কঠোর অবস্থানের কারণে রাইসি ইসরাইল তথা পশ্চিমাদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন।

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নেতা হিসাবে আবির্ভূত ইব্রাহিম রাইসি ইরানের তাবৎ শক্রদেশের কোপে পড়লেন কি না তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনান ডানাপালা মেলতে শুরু করেছে। আবার বহু গোষ্ঠী এবং সম্প্রদায়ে  বিভক্ত ইরানের কেউ বা কারা ‘পথের কাঁটা’ রাইসিকে সরাতে ষড়যন্ত্র করল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও। তবে এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর আদৌ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। 

এসি/

ষড়যন্ত্র রাইসি

খবরটি শেয়ার করুন