ছবি: সংগৃহীত
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে ছোট আকারের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এরপরই রয়েছে মাঝারি গরুর চাহিদা। বড় সাইজের গরু নিয়ে এসে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যাপারীরা। তারা যে দাম হাঁকাচ্ছেন তার অর্ধেক দাম বলছেন ক্রেতারা। তাই ব্যাপারীরা বেশ হতাশ। ঈদের বাকি দুই দিন, এর মধ্যে বড় সাইজের গরু বিক্রি করতে না পারলে কপালে হাত উঠবে তাদের।
রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত স্থায়ী-অস্থায়ী ২০টি হাটের মধ্যে গাবতলী, রামপুরার মেরাদিয়া, তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিকের খেলার মাঠ, হাজারীবাগ, কমলাপুরসহ কয়েকটি বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর ক্রেতা সবচেয়ে বেশি। বিক্রেতাদের মধ্যেও যারা এই আকারের গরু নিয়ে বাজারে এসেছেন তাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে।
বিভিন্ন আকারের ও রঙের গরু এসেছে হাটে। প্রচুর বড় গরু এনেছেন বিক্রেতারা। তবে মাঝারি গরুর সংখ্যাটা বেশি। সর্বনিম্ন ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাতে দেখা গেছে ব্যাপারীদের।
অপরদিকে খাসির দাম আকারভেদে সর্বনিম্ন ১০-১৫ হাজার, আর সর্বোচ্চ জাত ও আকারভেদে ৩০-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁকা হচ্ছে।
শুক্রবার (১৪ই জুন) গাবতলী গরুর হাটে দেখা যায়, বড় গরু বিক্রি হচ্ছে কম। দেশি ও ভারতীয় গরুই শুক্রবার বেশি বিক্রি হয়েছে। বিশেষ করে শাহীওয়াল জাতের গরুগুলোই ক্রেতারা পছন্দ করছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্রেতা ছিল কম। শুক্রবার সকাল থেকেই বিক্রি বাড়তে থাকে। জুমার নামাজের পর থেকে ক্রেতা সমাগম আরো বেড়েছে।
ব্যাপারীরা জানান, এবার হাটের অবস্থা ভালো নয়। ক্রেতাদের হাতে তেমন টাকা নেই বলে তাদের ধারণা। কারণ অধিকাংশ ক্রেতা হাটে ঢুকেই মাঝারি গরু খুঁজছেন। ফলে বড় সাইজের গরুর কি হবে তা নিয়ে তারা এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর ১ কোটি ৭ লাখ ২৩৯৪টি পশুর চাহিদার বিপরীতে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সরবরাহ রয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান জানান, এবারে চাহিদার তুলনায় ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। যা আমাদের দেশেই লালন-পালন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা, বাড়ির পথে ছুটছে মানুষ
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের সক্ষমতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই প্রতি বছর পশু কোরবানি হয়ে থাকে। এ বছর কোরবানির সক্ষমতার ক্ষেত্রে বছরজুড়ে ১০ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতির যে চাপ, তারও একটা প্রভাব পড়তে পারে। একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ, অন্যদিকে বাড়তি উৎপাদন খরচ; তাই ক্রেতাদের নজর ছোট গরুর দিকে।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়েছে এটা সত্য। কিন্তু কোরবানির পশুর কিন্তু সংকট নেই, বাজারগুলোতে প্রচুর দেশি গরু রয়েছে।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, ২০২৩ সালে পশু কোরবানি হয়েছে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি। এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ছিল শুধু গরু।
এছাড়া ১ লাখ ৭৮ হাজার মহিষ, ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার ছাগল এবং কয়েক লাখ অন্যান্য পশু কোরবানি হয়। যার বাজার মূল্য ছিল ৬৪ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। যা ২০১৭ সালে ছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা।
এসি/ আই.কে.জে/