ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার ‘এ দেশে কেউ ভূমি-গৃহহীন থাকবে না।’ সেই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় দেশের ৫৮টি জেলা ভূমি-গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে মঙ্গলবার (১০ই জুন)।
প্রধানমন্ত্রী এই দিন লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ, কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও এবং ভোলা জেলার চর ফ্যাশনে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর হস্তান্তর করবেন। সেই হিসেবে আগে ঘোষিত জেলা-উপজেলাসহ মোট ৫৮টি জেলা ও ৪৬৪টি উপজেলা ভূমি-গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী। আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে ঘর দেওয়ায় এখন পর্যন্ত ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ভূমি-গৃহহীন মানুষ পুনর্বাসিত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়েছেন ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জন মানুষ।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ৫ম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে মঙ্গলবার (১১ই জুন) সারাদেশে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম। মঙ্গলবার ঘর ও জমি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে আরও ২৬টি জেলা ও ৭০টি উপজেলা।
এর আগে ছয় দফায় ৩২টি জেলার সব উপজেলাসহ ৩৯৪টি উপজেলাকে ভূমি-গৃহহীন মুক্ত করা হয়েছে। নতুন করে ভূমি-গৃহহীন মুক্ত জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোণা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ।
আরো পড়ুন: আনার হত্যাকাণ্ডে অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আশ্রয়ণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, কেবল মুজিববর্ষের বিশেষ কর্মসূচির দ্বারা পুনর্বাসিত হয়েছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৬০ জন ছিন্নমূল মানুষ। এদেরকে বরাদ্দ দেওয়া ঘরের সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি। এসব ঘর ও জমি বরাদ্দ দিতে গিয়ে উদ্ধার করতে হয়েছে ৬ হাজার ৯৪৫ একর সরকারি খাস জমি, যার বাজার মূল্য ৩ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।
এছাড়া জমি কিনেও অসহায় মানুষকে পুনর্বাসন করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৩৭১ দশমিক ১০ একর জমি কেনা হয়েছে, এসব জমি কিনতে খরচ হয়েছে ২৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। কেনা জমিতে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসিত ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৪৫টি। এছাড়া জরাজীর্ণ ব্যারাক প্রতিস্থাপন করে একক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৮১১টি।
কেবল তাই নয় যাদের জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এমন পরিবারকেও ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৩টি। এছাড়া জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য কক্সবাজারের খুরুশকূলে নির্মিত বহুতল ভবনে বিনামূল্যে ৬৪০টি ফ্ল্যাট, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর ৬০০টিনদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১০০টি পরিবারকে ঘর এবং ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার পরিবারকে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
শুধু গৃহ-ভূমিহীন নয়, সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকেও দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। এর মধ্যে মান্তা, বেদে ও হিজড়া সম্প্রদায়, কুষ্ঠ রোগীদের জন্য রংপুরে বান্দাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প, তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের জন্য বিশেষ নকশার ঘর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় কয়লা খনির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (রাখাইন) পরিবারের জন্য বিশেষ নকশার টং ঘর নির্মাণ, ভিক্ষুক পুনর্বাসন, হরিজন সম্প্রদায়, বাগদী সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী পরিবার, জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ভূমি-গৃহহীন মুক্ত হচ্ছে ঢাকা জেলা। এই প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ, দোহার, সাভার ও কেরাণীগঞ্জ উপজেলায় কোনো ভূমিহীন পরিবার না পাওয়ায় ইতোমধ্যে ভূমি-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ধামরাই উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবনা অনুযায়ী শিগগিরই ধামরাই উপজেলাকে ভূমি-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া গণমাধ্যম বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প বিশ্বের মধ্যে একটি অনন্য প্রকল্প। কারণ, পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বিপুলসংখ্যক ভূমি-গৃহহীন পরিবারের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ঘর বিতরণ করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কেবল খাসজমিতে প্রকল্পের জন্য ঘর নির্মাণ করছে না, এর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছ থেকে জমি কেনা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও অনুদান পাওয়া যাচ্ছে।’
এইচআ/