ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন দলটির সাবেক নেতা মুনতাসির মাহমুদ। সারাদেশের আদালতগুলোতে পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) নিয়োগ দেওয়ার নামে আখতার ‘ঘুষ’ নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
আখতারের পাশাপাশি বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও তার বড় ভাই মাহবুব আলমের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বলেছেন, ছাত্র উপদেষ্টারা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করছেন।
এনসিপি স্থায়ীভাবে অব্যাহতি পাওয়া কেন্দ্রীয় সংগঠক মুনতাসির মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে জুলাইকে বিক্রি করে দিয়েছে ছাত্র উপদেষ্টারা। তিনি বলেন, ‘সব উপদেষ্টাদের মধ্যে এই ছাত্র উপদেষ্টারা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে। ছাত্র উপদেষ্টারা দুর্নীতির চ্যাম্পিয়ন।’
গতকাল শুক্রবার (১৪ই নভেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লাইভে এসে তিনি এ অভিযোগ করেন। এর আগে এনসিপির শীর্ষ নেতা আখতার হোসেনকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার জন্য ১ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন তিনি।
এনসিপির পদ ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উপপরিচালকের চাকরি হারিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলমকে দোষারোপ করছিলেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক মুনতাসির মাহমুদ। এরপর তাকে দল থেকেই বাদ দেওয়া হয়েছে।
এরপর এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এক ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন দলটির বহিষ্কৃত নেতা মুনতাসির মাহমুদ। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শেষ হয় আলটিমেটাম।
পরে লাইভে এসে মুনতাসির অভিযোগ করে বলেন, ‘৫ই আগস্টের পর কোনো সমন্বয় বা অন্য কেউ যখন কোনো সমস্যা নিয়ে বা অভিযোগ নিয়ে কোনো উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যেত, তখন তাদের বলা হতো ওই যে ছাত্র উপদেষ্টা আছেন তাকে বলো। তিনি যদি অনুমতি দেন তাহলে দেখা করতে দেব। ছাত্র উপদেষ্টাদের হাতে অ্যাবসুলেট পাওয়ার ছিল। ডিসি, ওসি, এসেনশিয়াল ড্রাগসের এমডি বসাও, পেট্রোবাংলার এমডি বসাও, একশো কোটি টাকা দুইশ কোটি টাকা নাও, অ্যাবসুলেট পাওয়ার ছিল তাদের। তারা জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি করেছে, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছে।’
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মুনতাসির মাহমুদ বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) নিয়োগ দিতে ৫০ লাখ করে টাকা দাবি করেছেন আখতার হোসেন।’ তিনি বলেন, ‘তখন আমি ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে তখন আসিফ নজরুল স্যারেরা দায়িত্ব নিয়েছেন। তখন সারাদেশে পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) বসানো হচ্ছে। তখন আমাদের নরসিংদীর শিরিন আপা (শিরিন আক্তার শেলী), তার ছেলে গোলাম রেশাদ তমাল আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন যিনি আন্দোলনে আহত হয়েছিলেন; সেই শিরিন আপার নাম প্রস্তাব করলাম।’
তিনি বলেন, ‘আখতারের লোকজন তখন শিরিন আপার নাম কেটে দিয়ে সেখানে আরেক নারীর থেকে টাকা খেয়ে, তার নাম দিয়ে দিল। অথচ এই শিরিন আপা ফ্যাসিবাদী আমলে কী পরিমাণ আন্দোলন করেছে, আমাদের কী পরিমাণ সমর্থন দিয়েছে এই আখতারকেও দিয়েছে, তা বলার মতো না।'
মুনতাসির মাহমুদ বলেন, ‘সে (আখতার) বলে পিপি বানাতে হলে ৫০ লাখ টাকা লাগবে। আরেকজনের কাছে থেকে টাকা নিয়ে শিরিন আপার নাম কেটে দিয়েছে আখতার হোসেন। পরে আমরা, তারেক ভাইসহ আসিফ নজরুলের কাছে গিয়ে বলেছি, উনি নির্যাতিত, আপনিও তাকে চেনেন; তার ছেলেও ভুক্তভোগী। এই মানুষটা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা নেননি এবং তিনি যোগ্য লোক, তাকে সম্মানিত করেন। আসিফ নজরুলকে এভাবে বলা পর, তিনি শিরিন আপাকে পিপি বানিয়েছে।’
প্রেস ক্লাবের একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুনতাসির বলেন, ‘যখনই আসিফ নজরুল তাকে (শিরিন) পিপি বানিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিয়ে বলে—আপা ৫০ লাখ টাকা লাগবে। আপনাকে পিপি বানিয়ে দিয়েছি। কাজ হয়ে গেছে, ৫০ লাখ টাকা লাগবে। শিরিন আপা খুশি হয়ে নিজের গাড়িতে বসে আখতারের পিএস আতিক মুন্সিকে খুশি হয়ে এক লাখ টাকা দিয়ে দিছে। অনেকে সাক্ষী আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এক লাখ টাকা দেওয়ায় সে (আখতার) রাগে-ক্ষোভে পড়েছে। শিরিন আপাকে আখতার কল দিছে। আখতার বলেছে ৫০ লাখ টাকা লাগবে, আমরা যেমন নাম দিতে পারি তেমনি নাম কেটেও দিতে পারি। এই ধরনের অন্যায় কথা বলেছে।’
দুর্নীতির এসব তথ্য ফাঁস করায় তার নিজের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলেও জানান মুনতাসির। তবুও ধীরে ধীরে এনসিপির দুর্নীতিবাজ অন্যান্য নেতাদের তথ্যও ফাঁস করবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
খবরটি শেয়ার করুন