ছবি : সংগৃহীত
স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেক সচেতন তানিশা ইয়াসমিন সুবর্ণা। ফল হোক বা সবজি—অর্গানিক কেনা চাই। সুপার শপ থেকে বেছে বেছে সতেজ আর অর্গানিক সব পণ্য কেনেন তিনি। শুধু কি কাঁচা খাবার? চাল, ডাল থেকে শুরু করে হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া সবকিছুই অর্গানিক দেখে কেনেন। দাম কিছুটা বেশি পড়লেও সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে তা মেনে নেওয়া যায়- এমনটাই দাবি তার।
সুবর্ণার মতো অনেকেই সুস্থ থাকতে অর্গানিক সব খাবার বেছে নেন। বাজারে এখন এমন পণ্য বেশ সহজলভ্যও বলা যায়। তবে লেভেলে অর্গানিক লেখা থাকলেই কি সব পণ্য অর্গানিক? একটি পণ্য অর্গানিক হওয়ার পূর্বশর্তগুলো কি ঠিকমতো মানছে এসব পণ্য?
অর্গানিক খাবার কী?
অর্গানিক ফুডের বাংলা জৈব খাদ্য। সাধারণত যেসব খাদ্য উৎপাদনে কোনো ধরণের রাসায়নিক সার, অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন বা কীটনাশক ব্যবহার হয় না তাদের অর্গানিক ফুড বলা হয়। এই খাবারগুলো হয় সারবিহীন। আর যদি ব্যবহার হয়েও থাকে তা জৈব সার। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব পণ্য উৎপন্ন করা হয়।
অর্গানিক পণ্যে জেনিটিক্যালি মোডিফাইড অর্গানিজম (জিএমও) থাকে না। অর্গানিক পণ্যের তালিকায় যেমন তাজা সবজি বা ফল রয়েছে, তেমনি আছে মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্য। ক্র্যাকার, পানীয়, ফাংশনাল ফুড এবং হিমায়িত খাবারের মতো পণ্যও অর্গানিক হতে পারে। তবে অবশ্যই তা অর্গানিক খাদ্যের সবগুলো শর্ত মানতে হবে। বর্তমানে পুরো বিশ্বেই অর্গানিক খাবারের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্গানিক হওয়ার পূর্বশর্ত কী?
খাবারের গায়ে অর্গানিক লেখা থাকা মানেই কিন্তু সেগুলো অর্গানিক নয়। দ্য টেলিগ্রাফে ২৩৭টি গবেষণার রিভিউ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এতে দেখা যায়, বাজারের সব অর্গানিক খাদ্য শতভাগ কেমিক্যালমুক্ত নয়। সাধারণভাবে উৎপন্ন ফল আর সবজির চেয়ে অর্গানিক ফল-সবজিতে মাত্র ৩০ ভাগ কীটনাশক কম পাওয়া গেছে। তার মানে কীটনাশক ব্যবহৃত হয় না এ ধারণা ভুল।
আরো পড়ুন : রুটির পুষ্টিগুণ বাড়াতে যে উপকরণ মেশাবেন
তবে কি শতভাগ অর্গানিক খাদ্যের বিষয়টি কেবলই মিথ? না। একটু কঠিন হলেও অর্গানিক ফুড উৎপন্ন করা সম্ভব। অর্গানিক হওয়ার মানদণ্ডগুলো পূরণ করলে তাকে অর্গানিক ফুড বলতে পারেন। বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাকশন ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের মতে, জৈব প্রক্রিয়ায় চাষের জন্য প্রধানত পাঁচটি মানদণ্ড মানা জরুরি। এগুলো হলো-
১। কমপক্ষে ৩ বছর জমি রাসায়নিকমুক্ত থাকতে হবে।
২। ১০ মিটার জমি রাসায়নিকমুক্ত হতে হবে।
৩। সার ব্যবহার করা হলে তা হতে হবে পরিবেশবান্ধব।
৪। সেচ পদ্ধতি নিরাপদ হতে হবে।
৫। বীজও হতে হবে অর্গানিক।
অনেকেই মনে করে চাষাবাদে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহৃত হয়নি মানেই পণ্যটি অর্গানিক। কেবল এই একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে কোনো কৃষিপণ্যকে অর্গানিক বলা যায় না। অর্থাৎ, চাষাবাদে রাসায়নিক সার অথবা কীটনাশক ব্যবহৃত হয়নি- কেবল এই দিকটিই একটি কৃষিপণ্যের অর্গানিক হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
ধরুন কোনো বিলে প্রাকৃতিক উপায়ে মাছ চাষ করা হয়। কিন্তু এর পাশে থাকা শস্যখেতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। আর বৃষ্টিতে সেই সার এসে মেশে বিলে। তাহলে কিন্তু এই মাছকে অর্গানিক বলা যাবে না।
বর্তমানে বাংলাদেশেও অর্গানিক ফুডের চাহিদা বাড়ছে। অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেড (ওএনএল) কাজ করছে অর্গানিক ফাংশনাল ফুড নিয়ে। কারকুমার মোড়কে অর্গানিক ফাংশনাল ফুডের কয়েকটি পণ্য বাজারে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আসল অর্গানিক খাবার চিনবেন কীভাবে?
বাজার থেকে কোনো অর্গানিক ফুড কেনার আগে তা সরকারের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর অরগানিক প্রোডাকশন (NPOP) এর স্বীকৃত কোনো সংস্থার দ্বারা পরীক্ষা করার পর প্রশংসাপত্র সার্টিফিকেট পেয়েছে কি না তা দেখে নিন। যদি পণ্যটি এই সার্টিফিকেট পেয়ে থাকে তবে লেভেলে ইউএসডিএ অর্গানিক (USDA organic) লোগো থাকবে। কিংবা যে সংস্থা সার্টিফিকেট দিয়েছে তার লোগো থাকবে। খাঁটি অর্গানিক পণ্যের ইইউ এবং জ্যাস সনদ থাকবে।
অর্গানিক ফুড বা পণ্য কেনার সময় এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে সহজেই খাঁটি পণ্য কিনতে পারবেন।
এস/ আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন