ছবি - সংগৃহীত
শোকাবহ ৩রা নভেম্বর। জেলহত্যা দিবস। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। নিষ্ঠুর এই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় কলঙ্কজনক ও বেদনাবিদূর দিন।
জাতীয় চার নেতা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহচর। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বন্দি থাকা অবস্থায় তার অবর্তমানে জাতীয় চার নেতা মুজিবনগর সরকার গঠন, রণকৌশল প্রণয়ন, শরণার্থীদের তদারকিসহ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার যাবতীয় কাজই করেন। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন তখন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিতেন এবং আন্দোলন সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যেতেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে চিরতরে ধংস করার উদ্দেশ্যে জাতীয় চার নেতাকে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যখন চার নেতাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেও কোনোভাবে নেওয়া যাচ্ছিল না, যখন বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবিচল আস্থা রেখে লোভ-লালসা ত্যাগ করে মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন, তখন খুনী চক্র ২২ আগস্ট জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তারা যেন প্রতিরোধ গড়তে না পারে সেজন্যই ঘাতক চক্র সেদিন পাশবিক হত্যাকাণ্ড চালায়।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দোসররা জাতীয় চার নেতার ওপর এতটাই ক্ষুব্ধ ছিল যে শুধু গুলি করেই হত্যা করেনি তাদের, গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের পরাজয়ের গ্লানি মিটিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড ছিল একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতার অংশ।
৩রা নভেম্বরের ঘাকত চক্র ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী চক্র। তারা জানতো এই চার নেতাকে বাঁচিয়ে রাখলে খুব দ্রুতই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে এবং তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হবে। এই নেতারা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেন, সেজন্য বঙ্গবন্ধুর পর তাদের ওপরই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের বেশি ক্ষোভ ছিল। পরাজয়ের প্রতিশোধ থেকেই বঙ্গবন্ধুর মতো জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
কারাগার হলো একজন কয়েদীর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। সেখানে প্রতিটি কয়েদীকে রাষ্ট্র নিরাপত্তা দেয়। খুনিরা সেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাতীয় চার নেতাকে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ঘাতকদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পরিবারকে জানানো হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। জেলখানাই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান, আর সেখানেই ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কী অপরাধ ছিল স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী বীর সন্তানদের? তাদের অপরাধ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে কোনো আপোস করেননি, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি, খুনী সরকারকে সমর্থন করেননি। এটিই তাদের অপরাধ।
জাতীয় চার নেতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে কোনো আপোস করেননি। কোনো লোভের কাছে পরাজিত হননি। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে মাথা নত না করে হাসি মুখে জীবন দিয়েছেন। জাতীয় চার নেতার মৃত্যু নেই। কর্মই তাদেরকে ইতিহাসে অমরত্ব দিয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি জাতি থাকবে, ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামের পাশে জাতীয় চার নেতার নাম ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন
জাতীয় চার নেতা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহচর। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বন্দি থাকা অবস্থায় তার অবর্তমানে জাতীয় চার নেতা মুজিবনগর সরকার গঠন, রণকৌশল প্রণয়ন, শরণার্থীদের তদারকিসহ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার যাবতীয় কাজই করেন। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন তখন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিতেন এবং আন্দোলন সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যেতেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে চিরতরে ধংস করার উদ্দেশ্যে জাতীয় চার নেতাকে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যখন চার নেতাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেও কোনোভাবে নেওয়া যাচ্ছিল না, যখন বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবিচল আস্থা রেখে লোভ-লালসা ত্যাগ করে মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন, তখন খুনী চক্র ২২ আগস্ট জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তারা যেন প্রতিরোধ গড়তে না পারে সেজন্যই ঘাতক চক্র সেদিন পাশবিক হত্যাকাণ্ড চালায়।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দোসররা জাতীয় চার নেতার ওপর এতটাই ক্ষুব্ধ ছিল যে শুধু গুলি করেই হত্যা করেনি তাদের, গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের পরাজয়ের গ্লানি মিটিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড ছিল একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতার অংশ।
৩রা নভেম্বরের ঘাকত চক্র ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী চক্র। তারা জানতো এই চার নেতাকে বাঁচিয়ে রাখলে খুব দ্রুতই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে এবং তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হবে। এই নেতারা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেন, সেজন্য বঙ্গবন্ধুর পর তাদের ওপরই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের বেশি ক্ষোভ ছিল। পরাজয়ের প্রতিশোধ থেকেই বঙ্গবন্ধুর মতো জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
কারাগার হলো একজন কয়েদীর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। সেখানে প্রতিটি কয়েদীকে রাষ্ট্র নিরাপত্তা দেয়। খুনিরা সেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাতীয় চার নেতাকে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ঘাতকদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পরিবারকে জানানো হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। জেলখানাই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান, আর সেখানেই ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কী অপরাধ ছিল স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী বীর সন্তানদের? তাদের অপরাধ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে কোনো আপোস করেননি, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি, খুনী সরকারকে সমর্থন করেননি। এটিই তাদের অপরাধ।
জাতীয় চার নেতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে কোনো আপোস করেননি। কোনো লোভের কাছে পরাজিত হননি। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে মাথা নত না করে হাসি মুখে জীবন দিয়েছেন। জাতীয় চার নেতার মৃত্যু নেই। কর্মই তাদেরকে ইতিহাসে অমরত্ব দিয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি জাতি থাকবে, ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামের পাশে জাতীয় চার নেতার নাম ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আই.কে.জে/