ফুফুর সঙ্গে সৈকতে সাইফোল্লাহ। ছবি: আল জাজিরা
আমেরিকার ফ্লোরিডার তরুণ উদ্যোক্তা ও আইসক্রিম দোকানের মালিক ছিলেন ২০ বছর বয়সী সাইফোল্লাহ মুসাল্লেত। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি। তার শোকবিহ্বল পরিবারের আশা—এই তরুণ যেন ‘শুধু আরেকটি সংখ্যা’ হয়ে হারিয়ে না যান। খবর আল জাজিরার।
গত ১১ই জুলাই পশ্চিম তীরের সিনজিল গ্রামে বসতভিটা রক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন সাইফোল্লাহ। তখন একদল ইসরায়েলি দখলদার তাকে ঘিরে ধরে নির্মমভাবে মারধর করেন। পরিবারের দাবি, অ্যাম্বুলেন্স আসার পরও দখলদাররা সাহায্যকারীদের আটকে রাখেন। সাইফোল্লাহর ছোট ভাই শেষে নিজের কাঁধে ভাইয়ের নিথর দেহ বয়ে নিয়ে যান চিকিৎসকের কাছে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, আমেরিকার ফ্লোরিডার পোর্ট শার্লট এলাকায় সাইফোল্লাহর বেড়ে ওঠা। তবে পরিবারের সংস্কৃতি ও ভাষার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কৈশোরের একটা লম্বা সময় কেটেছে পশ্চিম তীরে।
স্কুল শেষ করে তিনি ফিরে এসেছিলেন আমেরিকায়। বাবা ও আত্মীয়দের সঙ্গে টাম্পায় খুলেছিলেন ‘আইস স্ক্রিমিন’ নামে একটি ডেজার্ট শপ। সেই দোকানে তার নিখুঁত কাজ মুগ্ধ করত ফাতমাহ মুহাম্মদকে। ফাতমাহ একজন পেশাদার বেকার। সাইফোল্লাহ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সে এমনভাবে কনাফে সাজাত, যেন নিজেই শিল্পী। ২০ বছর বয়সে যেখানে অন্যরা ভিডিও গেম খেলছে, সে তখন ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছিল।’
সাইফোল্লাহর ফুফু সামেরার স্মরণে আছে—সাইফোল্লাহ সব সময় নিজে বিল দিতেন, নিজের হাতে খাবার নিয়ে আসতেন, পরিবারে সবার প্রতি ছিল গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আরেক ফুফু কেটি সালামেহ জানান, শেষবার দেখা হয়েছিল গত মে মাসে এক পারিবারিক বিয়েতে। সাইফোল্লাহ তখন মজা করে বলেছিলেন, ‘আমিও বিয়ে করতে চাই। এবার ফিরেই একটা পাত্রী খুঁজে নেব।’
কিন্তু সেই যাত্রা হয়ে উঠল তার জীবনের শেষ সফর। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, ‘ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের সংঘর্ষের’ সময় সাইফোল্লাহর মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন একপাক্ষিক হামলার শিকার।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মতে, ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ও দখলদারদের হাতে গাজার বাইরে অন্তত ৯৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
সাইফোল্লাহর মৃত্যুতে আমেরিকা এখনো কোনো স্বাধীন তদন্ত শুরু করেনি। ইসরায়েলে নিযুক্ত আম রাষ্ট্রদূত এই ঘটনায় ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’ দাবি করলেও অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন