নায়ক আলমগীর - ছবি: সংগৃহীত
বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি নায়ক আলমগীর। আশি ও নব্বইয়ের দশকে দাপুটে অভিনেতা ছিলেন আলমগীর। পর্দায় সাবলীল অভিনয় দিয়ে সব ধরনের চরিত্রে ফুটিয়ে তুলতেন নিজেকে। পারিবারিক টানাপোড়েন, সামাজিক অ্যাকশন, রোমান্টিক অ্যাকশন, ফোক ফ্যান্টাসিসহ সব ধরনের চলচ্চিত্রে তিনি ছিলেন সফল। সুদর্শন এই অভিনেতা সব ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও, সামাজিক চরিত্রে দর্শকরা তাকে বেশি পছন্দ করেন।
চিত্রনায়ক আলমগীর অভিনেতা হওয়ার অনেক আগে থেকেই চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত। বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশের অন্যতম প্রযোজক ছিলেন তার পিতা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া। পরবর্তীকালে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক, গায়ক ও পরিচালক হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করেছেন নায়ক আলমগীর।
নায়ক আলমগীরের পুরো নাম মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীর। ১৯৫০ সনের ৩ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে।
১৯৭৩ সালে ‘আমার জন্মভূমি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন আলমগীর। আলমগীর কুমকুম পরিচালিত যুদ্ধভিত্তিক এই চলচ্চিত্র মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন।
নায়ক আলমগীর - ছবি: সংগৃহীত
দেশবরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এই অভিনেতা। ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), মরণের পরে (১৯৯০), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), ও অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২) চলচ্চিত্রের জন্য টানা চারবার তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১০-সনে তিনি জীবন মরণের সাথী ও কে আপন কে পর (২০১১) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য টানা দুবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ মোট ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
এ ছাড়া ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘আজীবন সম্মাননায়’ ভূষিত হন এ অভিনেতা।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রায় সব নায়িকার সাথে অভিনয় করলেও নায়িকা শাবানার সাথেই দর্শকরা তাকে বেশি পছন্দ করতেন। এরপর একে একে এই জুটি উপহার দেন - অন্ধ বিশ্বাস, ভাত দে, মায়ের দোয়া, চাষির মেয়ে, সত্যের মৃত্যু নেই, মায়ের অধিকারসহ অনেক জনপ্রিয় ছবি।
শুধু অভিনয় নয়, গানও গাইতে পারেন আলমগীর। একসময় সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর কাছে গান শিখেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে প্লেব্যাকেও গান গেয়েছেন। ‘আগুনের আলো’, ‘কার পাপে’, ‘ঝুমকা’ ও ‘নির্দোষ’ চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন গুণী এই অভিনেতা।
নায়ক আলমগীরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন গীতিকার খোশনুর আলমগীর। তাকে বিয়ে করেন ১৯৭৩ সালে। গায়িকা আঁখি আলমগীর তাদের কন্যা।
চলচ্চিত্রের জন্য নিবেদিতপ্রাণ আলমগীর। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৯ সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ’-এর আহ্বায়ক হিসেবে আছেন তিনি। এর আগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন আলমগীর।
আই. কে. জে/