ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের একাদশ শ্রেণিতে অনলাইন মেধাতালিকায় নাম না থাকা ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছিল কলেজটির তিনজন কর্মচারী। ভর্তির সময় ও এইচএসসি ফরম পূরণের জন্য তাঁদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও নেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন কেন্দ্রে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে পারে যে, তাদের প্রবেশপত্র আসেনি। ফলে তাঁরা পরীক্ষাও দিতে পারেনি। এতে সেই ২৫ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত কলেজের তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদের পর গতকাল বিকেলে কলেজ চত্বর থেকে কলেজের অফিস সহায়ক হারুনুর রশিদ ও আমিনুল ইসলামকে আটক করে র্যাব। র্যাবের অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যান আরেক অভিযুক্ত কর্মচারী আবদুল হান্নান। পরে তাঁকে আটক করে শাজাহানপুর থানা পুলিশ।
র্যাব-১২-এর বগুড়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মীর মনির হোসেন বলেন, সরকারি শাহ সুলতান কলেজে ভুয়া ভর্তি দেখিয়ে ২৫ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুজন ভর্তি-বাণিজ্যে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম গতকাল রাত আটটার দিকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল আলম বলেন, সরকারি কলেজে এইচএসসি ভর্তির জন্য আসনসংখ্যা অনুযায়ী অনলাইনে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করা হয়। এর বাইরে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই। কলেজের তিনজন কর্মচারী কিছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভুয়া রসিদ হাতে ধরিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের একজন রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি ২০২১ সালে শাজাহানপুর উপজেলার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। শাহ সুলতান কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তির আবেদন করেও মেধা ও অপেক্ষামাণ তালিকায় স্থান না পাওয়ায় কলেজের পিয়ন হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই সময়ে ভর্তি ফি ২ হাজার ২০০ হলেও হান্নান ভুয়া রশিদ দিয়ে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর কলেজের বিভিন্ন ফি, পরীক্ষার ফি, ফরম পূরণ ফি ছাড়াও আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন খাতে ২ বছরে প্রায় ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কত স্বপ্ন ছিল! এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব। পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করব। জীবন থেকে দুই বছর ঝরে যাওয়ার পর জানলাম, আমাদের ভর্তিই করা হয়নি। এর দায় কলেজ প্রশাসনকেও নিতে হবে।’
এদিকে এ ঘটনায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড এবং সরকারি শাহ সুলতান কলেজ প্রশাসন দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গত শুক্রবার রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ূন কবীরকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং একই দিন সরকারি শাহ সুলতান কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রধান আবদুল জলিলকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুটি কমিটি গতকাল শনিবার কলেজে এসে তদন্ত শুরু করেছে। শিক্ষা বোর্ডের কমিটিকে ২১ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কলেজের কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এম.এস.এইচ/
খবরটি শেয়ার করুন