ছবি: সংগৃহীত
আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে তত্কালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার। মুজিবনগর সরকার হিসাবেই এর পরিচিতি বেশি। সেদিন গ্রামবাসী, কিছু সংখ্যক নবনির্বাচিত পরিষদ সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রথমে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অভিবাদন গ্রহণ করেন। সঙ্গে সঙ্গে বেজে ওঠে জাতীয় সংগীত। আওয়ামী লীগের চিফ হুইপ দিনাজপুরের অধ্যাপক ইউসুফ আলী স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ শেষ করলে মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে বাতাস। যাত্রা শুরু করে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’।
এর আগে ১০ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ গঠনের কথা বলা হয়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে শপথগ্রহণ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় পত্রপত্রিকা ও বেতার ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্রে, বেতারে এই সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর দেশের বিভিন্ন জেলা একের পর এক পাকিস্তানি সেনাদের দখলে চলে যাওয়ায় বিপ্লবী সরকার গঠনের জন্য সীমান্তের নিকটবর্তী এ আম্রকাননকেই নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় বৈদ্যনাথ বাবুর সেই আমবাগানের নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। মুজিবনগরকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী হিসেবেও ঘোষণা করা হয়।
সেদিনের ঐতিহাসিক মুহূর্তে দেশ-বিদেশের শতশত সাংবাদিকের উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ এবং শপথ অনুষ্ঠান সফলভাবে শেষ হয়েছিল মেহেরপুর ও মুজিবনগরের একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ কর্মীর সহযোগিতায়। ‘মুজিবনগর সরকার’ খ্যাত এ সরকারের দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিচালনায় ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালির নিজস্ব আবাসভূমি স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়।
এদিকে ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নিলেও ১৮ এপ্রিল মন্ত্রপরিষদের প্রথম সভায় মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা হলেন—এম মনসুর আলী (অর্থ বাণিজ্য ও শিল্প) এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি)। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ঘৃনিত ব্যক্তি খন্দকার মোশতাক আহমদও (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ) মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে থাকে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধরত অঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে প্রতিটিতে এক জন করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর অবদান রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন উল্লেখ করে বলেন, সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে হলেও ৩০ লাখ শহিদ ও ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান।
মুজিবনগরে আজ যত কর্মসূচি :ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। রাজধানীতে সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। এছাড়াও মুজিবনগরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, গার্ড অব অনার প্রদান এবং বেলা ১১টায় ‘শেখ হাসিনা মঞ্চে’ মুজিবনগর দিবসের জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ এমপি । জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সঞ্চালনা করবেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক।
এম/