সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওয়াগনার গ্রুপ ভেঙে দিচ্ছে রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:৪১ অপরাহ্ন, ২৮শে জুন ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

বিনা মেঘে বজ পাত হওয়ার মতো রুশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে বিশ্ব জুড়ে আলোচনায় আসা ওয়াগনার গ্রুপ ভেঙে দিচ্ছে রাশিয়া। ওয়াগনার প্রধান প্রিগোশিন ও তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল তা প্রত্যাহার  করা হয়েছে। চুক্তির আওতায় ওয়াগনার গ্রুপও তাদের সমরাস্ত্র জমা দিয়ে দিচ্ছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, এদের অস্ত্র নিয়মিত সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এদিকে কয়েক ঘণ্টার জন্য পুতিনের ঘুম কেড়ে নেয়া আলোচিত সেই প্রিগোশিন এখন বেলারুশে অবস্থান করছেন বলে সে দেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল এক ভাষণে বলেছেন, ওয়াগনার গ্রুপ মস্কোর বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল তার পেছনে ইউক্রেন এবং পশ্চিমাদের হাত আছে। তিনি বলেন, তার দেশের সাহসী সেনারা  রাশিয়ায় একটি গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিয়েছে।

মস্কোর সামরিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল রাশিয়ার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল ওয়াগনার গ্রুপ নামের ভাড়াটে সেনাদল। রুশ প্রেসিডেন্ট তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও মামলা প্রত্যাহার করেছেন। এর আগে পুতিন বলেছিলেন, ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যরা চাইলে নিয়মিত সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন। তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন, অথবা বেলারুশে যেতে পারবেন। পুতিন বলেছেন ওয়াগনার সদস্যদের বেশির ভাগই সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, কিন্তু তাদের বিভ্রান্ত করে অপরাধমূলক তৎপরতায় জড়ানো হয়েছিল।

এদিকে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি ঘোষণা করেছে তারা বিদ্রোহে জড়িত ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে সব ধরনের অপরাধের অভিযোগ তুলে নিচ্ছে। সশস্ত্র বিদ্রোহে জড়িত থাকার অভিযোগে এদের বিচার করার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়াতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে মস্কো।

এদিকে গতকাল বেলারুশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে পৌঁছেছেন। একটি জেট বিমান গ্রিনিচ মান সময় ৪টা ৩৭ মিনিটে মিনস্কে অবতরণ করে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে ইয়েভগেনি প্রিগোশিন কোথায় আছেন সে বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহের পর বেলারুশের সঙ্গে ক্রেমলিনের যে সমঝোতা হয়, সেই শর্ত অনুযায়ী প্রিগোশিনকে দেশটিতে যেতে দেওয়া হয়।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিদ্রোহের অবসানের জন্য যে চুক্তি হয়েছিল, তা এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সবসময় তার দেওয়া কথা রক্ষা করেন।

বিবিসি জানায়, যে দেশে কেবলমাত্র ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য বহু বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীকে দীর্ঘ কারাভোগ করতে হচ্ছে, সেখানে ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে এরকম আপসরফা বেশ অবাক হওয়ার মতো। ওয়াগনার গ্রুপের নেতা প্রিগোশিন এবং তার গ্রুপের সেনারা রাশিয়ার একটি শহরই শুধু দখল করে নেয়নি, তারা সামরিক বহর নিয়ে মস্কোর পথেও রওনা দিয়েছিল। যাওয়ার পথে তারা কয়েকটি রুশ সামরিক হেলিকপ্টার এবং একটি সামরিক বিমানও গুলি করে ফেলে দিয়েছিল।

সোমবার প্রেসিডেন্ট পুতিন যে ভাষণ দেন, তাতে তিনি নিশ্চিত করেন যে ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহীদের হাতে রাশিয়ার কয়েক জন পাইলট নিহত হয়েছেন। তবে টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক অডিও বার্তায় ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন দাবি করেছিলেন যে, তাদের বিদ্রোহের সময় ‘একজন সেনাও নিহত হয়নি।’ তবে তাদের সৈন্যরা গুলি করে একটি সামরিক বিমান ফেলে দেওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ঐ রুশ সামরিক বিমানটি তাদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছিল।

আরো পড়ুন: সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যে পালিত হচ্ছে ঈদুল আজহা

এদিকে, বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর প্রথম বার্তায় ওয়াগনার প্রধান প্রিগোশিন বলেন, তিনি সরকার উত্খাতের জন্য মস্কো অভিমুখে যাত্রা শুরু করেননি। তার দাবি, ওয়াগনার বাহিনীর দুটি শহরের সামরিক স্থাপনা দখল ও মস্কোর দিকে যাত্রার লক্ষ্য ছিল প্রতিবাদ জানানো, পুতিন প্রশাসনকে উৎখাত করা নয়। তিনি আরো বলেন, রুশ কর্তৃপক্ষ আগামী ১ জুলাই থেকে ওয়াগনার গ্রুপ বন্ধ করে দিয়ে এর সৈন্যদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ওয়াগনার গ্রুপ এর বিরোধী ছিল এবং কমান্ডাররা কেউই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে রাজি হননি। তিনি আরো বলেন, ওয়াগনার গ্রুপকে সক্রিয় রাখার উপায় বের করতে বেলারুশের নেতা আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো সহায়তা করেছেন।

এম/


Important Urgent

খবরটি শেয়ার করুন