পদ্মা সেতু - ফাইল ছবি
আজ পদ্মা সেতু উন্মোচনের এক বছর পূর্ণ হলো। গত বছর ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের এই সেতু উদ্বোধন করেন। পরের দিন ২৬ জুন থেকে যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়। এরপর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে শহুরে মানুষের। অপর দিকে, পদ্মা সেতুর রেলপথের শেষ স্লিপার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন গত ৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়। আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে মাওয়া ও ভাঙ্গা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। প্রকল্পটির রেল নেটওয়ার্ক ঢাকা হতে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল এই চারটি জেলা অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে সংযোজিত হবে।
সবমিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ইতিহাসে একটি মাইলফলক এই পদ্মা সেতু। বিশেষ করে এই সেতুর সঙ্গে মিশে আছে দেশের ১৭ কোটি বাঙালির সুখ-দুঃখ আর আর্থ-সামাজিক মুক্তির সোপান। যে পদ্মা সেতু একসময় বাঙালির কাছে স্বপ্ন ছিল তা এখন বাঙালির কাছে এক গৌরবোজ্জ্বল অহংকার।
পদ্মা সেতু - ফাইল ছবি
জানা গেছে, পদ্মা সেতু থেকে বছরে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি মাসে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা টোল আদায়ের লক্ষ্য ছিল। তবে চলতি মাসের গত ৭ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর টোল আদায় হয়েছে ৭৫৮ কোটি ৮ লাখ ৭৫০ টাকা। গত ১৪ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের জানান, গত বছরের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছিলেন। ঐ মাসের ২৬ জুন থেকে যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করার পরে চলতি মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত ৭৫৮ কোটি ৮ লাখ ৭৫০ টাকার টোল আদায় হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার টোল আদায় হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে ৭১ কোটি ১৩ লাখ টাকার টোল আদায় হয়েছে। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন পদ্মা সেতু থেকে প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। আর গড়ে প্রতিদিন সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ১৬ হাজার ২২৩টি।
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের সেতু পদ্মা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনে পদ্মা নদীই ছিল একমাত্র বাধা। পদ্মায় সেতু হওয়ায় সে বাধা কেটেছে। এই সেতুর ফলে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বার বার গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারছে। মাত্র ২/৩ ঘণ্টায় বাড়ি থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে। আগে যেখানে কয়েক দিন পর্যন্ত লেগে যেত সেখানে এখন জেলেদের মাছ ও কৃষকদের পণ্য খুব কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সেতুটি জিডিপিতে ৪২ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা যোগ করবে। যা মোট জিডিপির ১.২%-এর সমান। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে মোংলা ও পায়রা বন্দরের যোগাযোগ সহজতর করার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা সেতু দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১.২% প্রবৃদ্ধি আনবে।
জানতে চাইলে ঢাকায় চাকরি করেন মাদারীপুরের শিবচরের এমন অসংখ্য ব্যক্তি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঈদ ছাড়া দুই/এক বারের বেশি বাড়ি ফেরা হয়ে উঠতো না। নৌপথের ভোগান্তির কথা মাথায় এলেই আর ঢাকা ছাড়তে ইচ্ছে করতো না। আর এখন বৃহস্পতিবার বিকাল হলেই মন চলে যায় বাড়িতে। এ কারণে গত এক বছর হলো গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে।
পদ্মা সেতু চালুর পর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী গ্রামের মানুষগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হরহামেশাই ছুটে আসছেন বাড়িতে। গ্রাম থেকে যারা এক প্রকার বিচ্ছিন্ন ছিলেন, সেই শহুরে মানুষের আসা-যাওয়া বেড়েছে গ্রামের বাড়িতে। বাড়ছে মেলবন্ধনও। পাশাপাশি পরিবার-পরিজন রেখে কংক্রিটের নগরে একঘেঁয়েমি জীবন-যাপন যারা করছেন, তাদের মনে প্রশান্তি জাগিয়েছে পদ্মা সেতু। ভোরে রাজধানী ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে তৈরি সকালের নাস্তা করেন এমন সংখ্যাও কম নয়।
এদিকে উদ্বোধন ও যানচলাচল শুরুর এক বছর পর পদ্মা বহুমুখী সেতুর ব্যয় ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৮০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এই ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গত ২২ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির এই বৈঠক হয়।
আরো পড়ুন: আজ মিনায় যাবেন বাংলাদেশি হজযাত্রীরা
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৮০ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এম/ আই. কে. জে/