বুধবার, ৩রা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার কারণ কি ওয়াসার পানি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১০:২৮ অপরাহ্ন, ৯ই মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

গত দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার লবণাক্ত পানি পান করছেন নগরীর বাসিন্দারা। গত দুই সপ্তাহ ধরে লবণাক্ততার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধ। এই পানি পানে ঘরে ঘরে ডায়রিয়া ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ওয়াসার লবণাক্ত, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা এবং কিডনি রোগে আক্রান্তের কারণ হতে পারে। প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এটি এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি মারাত্মক লবণাক্ত বলে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের শঙ্কা প্রকাশ করছেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক রসায়নবিদ ও কর্ণফুলী নদী গবেষক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, ‘লবণের পরিমাণ যদি লিটারে ৩৫০-৪০০ মিলিগ্রাম হয়, তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধদের জন্য বিপজ্জনক। এই পানি পানে ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে।’

একই কথা বলেছেন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার দত্ত। অতিরিক্ত লবণাক্ততা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘বেশি লবণাক্ত পানি পানে ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা আছে।’

পানি এত লবণাক্ত, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত কেন জানতে চাইলে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘ওয়াসার পানির উৎস হালদা ও কর্ণফুলী নদী। দুই নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে।

কমেছে মিঠা পানি। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে পানির স্তর কমে যাওয়ায় কম ছাড়ছে। ফলে হালদায় উজানের পানির চাপ কমে যাওয়ায় কর্ণফুলীর লবণাক্ত পানি জোয়ারের সময় হালদায় ঢুকছে। আমরা অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি পাচ্ছি।’

হালদার যে পয়েন্ট থেকে মোহরা শোধনাগার পানি সংগ্রহ করে সেখানে লবণাক্ততা বেড়েছে উল্লেখ করে মাকসুদ আলম বলেন, ‘পরিশোধনের পরও সরবরাহকৃত পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ লিটারে ৩৫০-৪০০ মিলিগ্রাম থেকে যাচ্ছে। এতে মানুষজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন কিনা, তা আমার জানা নেই।’

দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় কর্ণফুলীতে লবণাক্ত পানি বেড়েছে বলে জানালেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘জোয়ারের সময় এসব পানি হালদায় ঢুকছে।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পানি না আসায় লবণাক্ততা থেকেই যাচ্ছে। তবে বৃষ্টি হলে এই সমস্যা থাকবে না।’

ওয়াসা সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে মোহরা পানি শোধনাগার চালু হয়। ১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো পানিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। ২০০৭, ২০০৯ সালেও হালদার পানিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য ২০০৯ সালে কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটি পরবর্তীতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে। সেইসঙ্গে শুষ্ক মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় নদীর পানির লবণাক্ততা রোধে কাপ্তাই হ্রদ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এ জন্য কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রকে বর্ষা মৌসুম থেকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে পিডিবিকে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা।

দুই মাসের বেশি সময় ধরে লবণাক্ত পানি পান করছেন বলে জানিয়েছেন নগরীর হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা শফিকুল আলম মুবিন। তিনি বলেন, ‘দিন দিন লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ময়লা ও দুর্গন্ধ। ফলে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি।

আমার ঘরে দুই জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এলাকার প্রতি ঘরে ডায়রিয়া রোগী আছে। গুরুতর আক্রান্ত হলে কেউ কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে। বিষয়টি ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কোনও সুফল মিলছে না।’

গত দুই মাস ধরে পানি লবণাক্ত উল্লেখ করে বহদ্দারহাট চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল নাওয়ার নরজিন বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে পানিতে ময়লা-আবর্জনা এবং দুর্গন্ধ। মুখে নেওয়া যাচ্ছে না।

প্রতিদিন বোতলজাত পানি কিনতে হয়। ওয়াসার বিল পরিশোধের পরও মাসে তিন-চার হাজার টাকার পানি কিনতে হচ্ছে। বিষয়টি অমানবিক। সংসারে ব্যয় বেড়েছে। সমাধান পাচ্ছি না।’

আরো পড়ুন: পাঁচ সিটিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে: ইসি

গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২৩২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

আক্রান্তদের অনেকের শরীরে মিলেছে কলেরার জীবাণু। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩০-৩৫ শতাংশ রোগীর শরীরে মিলেছে কলেরার জীবাণু। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এসি/ আইকেজে 

চট্টগ্রাম ডায়রিয়া ওয়াসা পানি

খবরটি শেয়ার করুন