শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জম্মু-কাশ্মীরে সুদিন, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত পাকিস্তানী কাশ্মীরীরা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক সেক্রেটারি জামিল মাকসুদ। ছবি : সংগৃহীত

জম্মু-কাশ্মীরের দখলদারিত্ব প্রধানত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত। ভারতের অধীন জম্মুতে সম্প্রতি সবচেয়ে বড় সেতু নির্মিত হয়েছে। একইসাথে এখানকার হাইওয়ে এবং রেলওয়ে সুবিধাগুলোও উন্নীত করা হচ্ছে।

ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক সেক্রেটারি জামিল মাকসুদ বলেছেন, পিওকে-র লোকেরা এখন সীমান্তের ওপারে দ্রুত অগ্রগতি এবং উন্নয়ন ঘটছে তা সম্পর্কে সচেতন।

তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াও এমন এক ধরণের মিডিয়া যা একটি জাতি, সরকার বা রাষ্ট্র যা দেখতে বা প্রকাশ করতে চায় না তা প্রকাশ করে। তাই সোশ্যাল মিডিয়াই সব দেখাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, জম্মু অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সেতুটি নির্মিত হয়েছিল এবং লোকেরা নির্মাণ প্রক্রিয়াটি দেখছিল। তারা এটি দেখে উল্লাস করেছে যা ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। এই জাতীয় জিনিস মানুষকে শেখায় যে কীভাবে অপর প্রান্তের লোকেরা বিকাশ করছে এবং অগ্রগতি করছে।’

তিনি ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি আমরা সংবিধান সম্পর্কে কথা বলি, আমাদের সাংবিধানিক অধিকার নেই, আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারি না যদিও আমরা ভোট দিতে পারি।’

একদিকে ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মীরের উন্নতি করছেন, অন্যদিকে পাকিস্তানের অধীন কাশ্মীরের মানুষদের নিজস্ব রাস্তা মেরামতের জন্য অনুদান সংগ্রহ করতে হচ্ছে, পাকিস্তান সরকার কোন সাহায্যই করছে না তাদের। পিওকে এর নাগরিকেরা এখানে কোন ধরনের সাংবিধানিক অধিকার পর্যন্ত ভোগ করতে পারে না। এখানকার নাগরিকেরা ভোট দিতে পারলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার তাদের নেই।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জোরপূর্বক ভারতের কাছ থেকে কাশ্মীর এবং গিলগিট-বাল্টিস্তান দখল করে নেয়। এ অঞ্চলসমূহ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অনিয়মিত সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো নানা সমস্যায় জর্জরিত।

পাকিস্তান সরকার কাশ্মীরের বাসিন্দাদের যে পরিমাণে শোষণ করে চলেছে এতে তারা সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ।

এই পিওকেতেই নয়টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাঁধ নির্মিত হয়েছে, অর্থাৎ এখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই কোটি কোটি টাকা আয় করছে পাকিস্তান। অথচ এই অঞ্চলেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা জনগণের কাছে রীতিমতো অসহনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৬০ এর দশকের শেষ দিকে এখানকার নাগরিকদের বসতভিটা, জমিজমা ধ্বংস করে নির্মাণ করা হয় মংলা বাঁধ। তখন পাকিস্তান সরকার কাশ্মীরিদের আশ্বাস দিয়ে বলে যে তাদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান সরকার তার কথা রাখেনি। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ তো অনেক পরের কথা তাদেরকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎটুকুও সরবরাহ করা হয়নি।

পিওকে থেকে প্রতি ইউনিট ২.৫০ টাকা দামে বিদ্যুৎ কিনছে পাকিস্তান সরকার। অথচ এখানকার নাগরিকদের সরকারের কাছ থেকে প্রতি ইউনিট ৬০ টাকা দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। অথচ পাকিস্তানের আশেপাশের দেশগুলো যেমন, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তানে বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ভারতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম মাত্র ৬ টাকা।

গত কয়েক বছর ধরেই পিওকে এবং গিলগিট-বাল্টিস্তানের জনগণ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ নির্যাতন মূলত ১৯৪৭ সাল থেকেই চলে আসছে। তখনকার মানুষ এ নির্যাতনের প্রতিবাদ না করতে পারলেও এখন তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ অনেক সচেতন। পিওকে এবং গিলগিট-বাল্টিস্তানের জনগণ তাদের অতীত ইতিহাস জানতে শুরু করেছেন। তারা বুঝতে পারছেন পাকিস্তান সরকার শুধুমাত্র নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে কি করে তাদের শোষণ করে চলেছে এবং তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় সব দিক দিয়ে হেয় করে চলেছে।

যখনই এখানকার লোকেরা প্রতিবাদের চেষ্টা করেছে, তখনই পাকিস্তান সরকার এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে এভাবে খুব বেশিদিন পাকিস্তান সরকার তাদের আটকে রাখতে পারবে না। খুব শীঘ্রই এখানকার জনগণ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হবে।

এসকে/ এএম/ 


পাকিস্তান ভারত জম্মু-কাশ্মীর

খবরটি শেয়ার করুন