ছবি: সংগৃহীত
ইসলামে মানুষের ওপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘...কাউকে তার সাধ্যাতীত কার্যভার দেওয়া হয় না...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘...তিনি (আল্লাহ) দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি...।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৭৮)
তাই ইসলামের দৃষ্টিতে নিজের কিংবা অন্যের ক্ষতি করা নিষিদ্ধ। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও উবাদাহ বিন সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিজের ক্ষতি করা যাবে না এবং অন্যের ক্ষতিও করা যাবে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৪০)
জীবন বাঁচাতে অবৈধ খাবার যখন বৈধ: জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনে হারাম বস্তুও হালাল হয়ে যায়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যার ওপর (জবাই করার সময়) আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারিত হয়েছে তা তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। কিন্তু যে অনন্যোপায় অথচ নাফরমান কিংবা সীমা লঙ্ঘনকারী নয়, তার কোনো পাপ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩)
জীবন বাঁচাতে মৃত বস্তু খাওয়া: জীবন বাঁচাতে মৃত বস্তু খাওয়ার ব্যাপারে একটি ঘটনা হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায়। জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজন নিয়ে হাররা নামক স্থানে যাত্রাবিরতি করল। অন্য এক ব্যক্তি তাকে বলল, আমার একটি উট হারিয়ে গেছে। তুমি তা পেলে ধরে রাখবে। সে উটটি পেয়ে গেল। কিন্তু মালিককে পেল না। উটটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার স্ত্রী তাকে বলল, এটা জবাই করো, কিন্তু সে জবাই করতে সম্মত হলো না। উটটি মারা গেলে তার স্ত্রী বলল, এর চামড়া ছাড়াও। তাহলে এর গোশত ও চর্বি আগুনে জ্বালিয়ে খেতে পারব। স্বামী বলল, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করে দেখি। সে তাঁর কাছে এসে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তোমার কাছে এমন কিছু কি আছে, যা তোমাকে মুর্দা খাওয়া থেকে মুখাপেক্ষিহীন করতে পারে? সে বলল, না। তিনি বলেন, তবে তা খাও। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর উটের মালিক ফিরে এলে সে তাকে ঘটনা অবহিত করল। সে বলল, তুমি জবাই করলে না কেন? সে বলল, তোমার উট জবাই করতে লজ্জাবোধ করেছি। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮১৬)
জীবন বাঁচাতে আবশ্যিক বিষয় ছেড়ে দেওয়া: জীবন বাঁচানোর জন্য ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ আছে। জাবের (রা.) বলেন, একবার আমরা কোনো এক সফরে বের হলে আমাদের মধ্যকার একজনের মাথা পাথরের আঘাতে ফেটে যায়। ওই অবস্থায় তার স্বপ্নদোষ হলে সে সাথীদের জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি আমার জন্য তায়াম্মুমের সুযোগ গ্রহণের অনুমতি পাও? তারা বলল, যেহেতু তুমি পানি ব্যবহার করতে সক্ষম, তাই তোমাকে তায়াম্মুম করার সুযোগ দেওয়া যায় না। অতএব সে গোসল করল। ফলে সে মৃত্যুবরণ করল। আমরা নবী (সা.)-এর কাছে এলে তাঁকে বিষয়টি জানানো হলো। তিনি বলেন, এরা অন্যায়ভাবে তাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন। তাদের যখন (সমাধান) জানা ছিল না, তারা কেন জিজ্ঞেস করে তা জেনে নিল না। কারণ অজ্ঞতার প্রতিষেধক হচ্ছে জিজ্ঞেস করা। ওই লোকটির জন্য তায়াম্মুম করাই যথেষ্ট ছিল। আর জখমের স্থানে ব্যান্ডেজ করে তার ওপর মাসাহ করে শরীরের অন্যান্য স্থান ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট হতো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৩৬)
জীবন বাঁচাতে মুখে কুফরি শব্দ উচ্চারণ: জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনে মুখে কুফরি শব্দ উচ্চারণ করার অবকাশ আছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফরির জন্য হৃদয় উম্মুক্ত রাখলে তার ওপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব। এবং তার জন্য আছে মহাশাস্তি। তবে ওই ব্যক্তির জন্য নয়, যাকে কুফরির জন্য বাধ্য করা হয়; কিন্তু তার অন্তর ঈমানে অবিচল।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১০৭)
আরো পড়ুন: আত্মীয়-স্বজনকে কেন সাহায্য করবেন?
জীবন বাঁচাতে মদ্যপান: কোনো ব্যক্তি যদি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় যে তার কাছে মদ ছাড়া আর কোনো খাবার বা পানীয় নেই এবং তার জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়, তাহলে ওই ব্যক্তির জন্য বিশেষ পরিস্থিতিতে মদ্যপান করা বৈধ। তবে শর্ত হলো, তৃপ্তির সঙ্গে তা পান করবে না। বরং জীবন বাঁচাতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে চার মাজহাবের ইমামরা একমত। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৪১২)
এম এইচ ডি/
খবরটি শেয়ার করুন