শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস

স্বাস্থ্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, ৩রা জুলাই ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

গর্ভধারণের পর রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আর সন্তান জন্মদানের পর সাধারণত এই সমস্যা চলেও যায়।

স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য সঠিক খাবার খাওয়া জরুরি। আর যদি ইতোমধ্যে জেস্টেইশনাল ডায়াবেটিস দেখা দিয়ে থাকে তাহলে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

গর্ভধারণ করার পরপরই আশপাশের অনেকেই নানান রকম খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা অনুসরণের পরামর্শ দেন, যার কয়েকটা কার্যকর আবার কয়েকটা কুসংস্কার।

যেমন- কেউ বলতে পারে, গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে না। অনেকে আবার বলবে দুজনের জন্য খেতে হবে ইত্যাদি।

গর্ভকালীন অবস্থায় বিশেষ করে জেস্টেইশনাল ডায়াবেটিস দেখা দিলে খাবারের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।

‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে মালয়েশিয়াতে জেস্টেইশনাল ডায়াবেটিসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি প্রায় ১৮.৩ শতাংশ। আর ভারতে ১৩.৬ শতাংশ।

জেস্টেইশনাল ডায়াবেটিস কী?

ভারতের ফরিদাবাদের ফোর্টিস এসকোর্ট হসপিটালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিনের পরামর্শক ডা. অনুরাগ আগারওয়াল হেল্থ শটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “গর্ভাবস্থায় ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের দিকে মায়েদের ডায়াবেটিসের প্রবণতা দেখা দেয়। এই সময়ে রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে ইন্সুলিনের প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়ে।”

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, জেনেটিক প্রবণতা ও ওজন বৃদ্ধি জেস্টেইশনাল ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এর ফলে সন্তান জন্মদানের সময় অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি বাড়ে, শিশুর রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে বা জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

খাদ্যাভ্যাস

সুখবর হল, সাধারণত সন্তান জন্মদানের পরে জেস্টেইশনাল ডায়াবেটিস ভালো হয়ে যায়। তবুও মা ও শিশুর সুস্থতায় খাবার নির্বাচনে সঠিক পছন্দ ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন আছে। 

>> উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার: শস্য ধরনের খাবার, মটর, সবজি ও ফল ভালো খাদ্যাভ্যাসের অংশ। এসব খাবার রক্তের শর্করারা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, পেট ভরা রাখে এবং সারাদিন শক্তি যোগাতে সহায়তা করে, জানান ডা. আগারওয়াল।

>> চর্বিহীন প্রোটিন: মুরগি, মাছ, টফু ও ডাল ধরনের খাবার অস্বাস্থ্যকর চর্বি ছাড়াই অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি সরবারহ করে। প্রোটিন রক্তের শর্করার মাত্রা সঠিক রাখে যা শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

>> স্বাস্থ্যকর চর্বি: বাদাম, বীজ ও জলপাইয়ের তেল স্বাস্থ্যকর চর্বির ভালো উৎস যা সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। রক্তের শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

এই চর্বি পেট ভরা ভাব আনে, ইন্সুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় বলে জানান ডা. আগারওয়াল।

>> কম চর্বির দুধের তৈরি খাবার: স্কিম মিল্ক, কম চর্বির দই ও পনিরে আছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি। যা মায়ের হাড়ের সুস্থতায় এবং শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

>> শ্বেতসারহীন সবজি: ব্রকলি, পালংশাক, ফুলকপি এবং ক্যাপসিকাম কম কার্বোহাইড্রেইট, উচ্চ ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার। এগুলো সুষম খাবার তালিকায় রাখা আবশ্যক। এতে রক্তের শর্করার সঠিক মাত্রা বজায় থাকে।

যেসব খাবার এড়ানো উচিত

জেস্টেইশনাল ডায়াবেটিস দেখা দিলে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এর মধ্যে সোডা বা কোমল পানীয় ও মিষ্টি পানীয় অন্যতম। এসব খাবারে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে যা রক্তের শর্করা বাড়িয়ে দেয়। আর শূন্য ক্যালরি সরবারহ করে।

>> পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেইট: সাদা রুটি, মিষ্টি শস্য, পেস্ট্রি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিমিত খাওয়া অথবা বাদ দেওয়া উচিত। এসব খাবার দ্রুত রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। আর কোনো পুষ্টি উপাদানও থাকে না।

>> ট্রান্স ফ্যাট বা স্যাচুরেইটেড ফ্যাট: কড়া ভাজা খাবার, চর্বিসহ মাংস এবং উচ্চ চর্বি যুক্ত দুধের তৈরি খাবার ইন্সুলিন প্রতিরোধী ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় বলে জানান, এই বিশেষজ্ঞ।

>> অতিরিক্ত লবণ খাওয়া: উচ্চ সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন- টিনজাত সুপ, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এসব খাবার দেহে পানি ধরে রাখার মাত্রা বাড়ায় এবং উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি করে।

আরো পড়ুন: ছোলা খেলে বাড়ে যৌনশক্তি

সুষম খাদ্য পরিকল্পনায় পুষ্টিকর খাবার থাকায় তা সারাদিনের ক্ষুধাভাব কমায় ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। এতে রক্তের শর্করা স্বাভাবিক থাকে।

গর্ভবতী মায়েদের এই সময়ে খাবারের প্রতি অনেক বেশি সচেতন ও যত্নশীল হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

এম এইচ ডি/  আই.কে.জে/

জেস্টেইশনাল গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস খাদ্যাভ্যাস গর্ভবতী মা পুষ্টিকর খাবার

খবরটি শেয়ার করুন