ছবি: সংগৃহীত
তীব্র যানজট। উষ্ণ শহর। বাইরে বেরোলে মনমেজাজ তিরিক্ষি হওয়ার জোগাড়। কোথায় মেলে শান্তির পরশ? চলুন তবে, একবার শান্তি গ্রামে ঢুঁ মেরে আসি।
কী ভাবছেন? শহরের ভিড় পেরিয়ে, নানান রকম দায়িত্ব ফেলে রেখে গ্রামে যাওয়ার সময় কীভাবে পাবেন? নাহ, শহরের বাইরে যাওয়ার কথা বলছি না। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একেবারে শহুরে ভিড়বাট্টার মাঝেই এক রেস্তোরাঁর নাম শান্তি গ্রাম।
রেস্তোরাঁর অন্দরজুড়েই খুঁজে পাবেন গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে। একটা পাশ একেবারেই খোলামেলা। সেখানটায় ঝলমলে রোদ্দুর। ওহ, আজ তো পয়লা আষাঢ়। বৃষ্টির সময়টায় অঝোর বর্ষণও তো নেমে আসতে পারে সেখানটায়। বৃষ্টি যদি নেমেই যায় ঝুম বর্ষায় খিচুড়ি তো জম্পেশ।
প্রকৃতি যখন অন্ধকার, তখন অবশ্যই অন্দরের কৃত্রিম আলোয় সময় কাটাতে হবে। তবে ঝুলন্ত ল্যাম্প শেডগুলোতেও রয়েছে বেতের সংমিশ্রণ। তাই প্রকৃতিকে অনুভব করতে পারবেন যেকোনো সময়ই। ঝুলিয়ে দেওয়া গাছের লতার দোলায় মনে আসে প্রশান্তি। মাটির জলাধারেও আছে জলজ উদ্ভিদ আর খুদে মাছের দল।
মেঝেতে অন্দরসজ্জার জমকালো কারুকাজ নেই। খালি পায়ে সাদামাটা মেঝেতে হেঁটেই উপভোগ করতে পারবেন আদিমতার পরশটুকু।
পরিবেশন পাত্রের অধিকাংশই প্রকৃতি থেকেই নেওয়া। বাটি, গ্লাস, ট্রে এমনকি স্ট্রগুলো পর্যন্ত বাঁশের তৈরি। দৃষ্টিনন্দন পানীয়ের জন্য অবশ্য রয়েছে কাচের জার। কোস্টারগুলো পাটের। বাঁশ দিয়ে গড়া টেবিল আর টুল অন্দরে এনেছে ভিন্নরূপ। ধাতব কাঠামোর ওপর কাঠের পরত বসানো টেবিল আর টুলগুলোও বেশ। মন চাইলে কাঠের পাটাতনের দোলনায় একটু দোলও খেতে পারবেন। লম্বা বেঞ্চও আছে।
দরজা-জানালা আর দেয়ালের হালকা নকশার আলপনায় গ্রামের পাবেন গ্রামের ছোঁয়া। বাঁশের পাত্র সাজানো আছে এক দিকে। নকশিকাঁথায় বাংলাদেশের মানচিত্র, বাঁধানো নকশিকাঁথা আর শুকনা পাতায় সেলাইয়ের কাজে বাংলা বর্ণের উপস্থিতিতে ফুটে উঠেছে বাঙালিয়ানা। আর তাতেই অনন্য এ অন্দর। বাইরের দিকে মেঝেতে শতরঞ্জি বিছানো জায়গায় বসে খাওয়ার সুযোগও আছে।
২০২২ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে শান্তি গ্রাম। সারওয়াত সামিন আর বিস্কুটের সম্মিলিত এ প্রয়াস বেশ সাড়া ফেলেছে নগরবাসীর মধ্যে। সারওয়াত সামিন ভ্রমণপিপাসু মানুষ, লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত। রিকশাচিত্রের মতো ঐতিহ্যবাহী শৈল্পিক কাজে নিবেদিতপ্রাণ বিস্কুটের ভাবনা থেকে দুই বন্ধুর এই উদ্যোগের সূচনা।
পরিবেশবান্ধব এই উদ্যোগে প্লাস্টিক উপকরণের ব্যবহার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা হয়। বিশুদ্ধতার সর্বোচ্চ দিতে সচেষ্ট থাকাটাই যেন তাঁদের এক নিরন্তর সংগ্রাম। তাঁদের খাবারে ব্যবহার করা হয় হাতে তৈরি মাখন, বিশুদ্ধ ঘি। নিজেদের তত্ত্বাবধানে ভাঙানো মসলা দিয়ে শান্তি গ্রামের রান্না হয়। শুধু খাবারই নয়, ক্রেতাদের মানসম্মত সেবাটাও দিতে চান তাঁরা।
আরও পড়ুন: মরুভূমির বিশাল হাত!
রেস্তোরাঁ খোলা থাকে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ। ঠিকানা: বাড়ি ৩৬, ধানমন্ডি ৯/এ, ঢাকা। রেস্তোরাঁটি ভবনটির নিচতলাতেই, যেতে হবে বুটিক হাউস ‘খুঁত’-এর ভেতর দিয়ে।
এসি/আইকেজে