ছবি-ফাইল
আবহমানকাল থেকে পাঙ্গাস মাছ এদেশের মানুষের জন্য রসনার উৎস হিসেবে পরিচিত। এই মাছটি প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এক সময়ে পাঙ্গাস মাছ আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে উচ্চবিত্তের মাছ হিসেবে বিবেচিত ছিল।
বর্তমানে পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে নদীর নাব্যতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাথে সাথে এর প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে পাঙ্গাস মাছের উৎপাদনও ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। তবে পুকুরে পাঙ্গাস চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় আশির দশক থেকেই এর ওপর কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।
সম্প্রতি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কিন্তু মহাবিপন্ন এই মেকং জায়ান্ট পাঙ্গাস নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন দেশীয় বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এই মাছের কৃত্রিম প্রজনন সফল হলে শুধু জাতটি রক্ষা পাবে না দেশের মৎস্যখাতে সূচনা হবে নতুন বিপ্লবের।
মেকং জায়ান্ট পাঙ্গাস, যার ওজন ১২০ কেজি। আর জলকেলি করছে পুকুরেই। অনেকের কাছে অবাক বিস্ময়ের হলেও এই লংকাকাণ্ড ঘটিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বিশাল আকারের পাঙ্গাস ঝাঁকের জলকেলি মেকং নদীর কুলে নয়, বাংলাদেশের পুকুর কিনারায়। পৃথিবীর সবেচেয় বড় জাতের এই পাঙ্গাস বাংলাদেশে আসে ২০০৬ সালে থাইল্যান্ড থেকে।
বেড়ে ওঠে ত্রিশালের একটি হ্যাচারিতে। তবে ২০১৫ সালে ৫০টির ঠিকানা হয় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-বিএফআরআইয়ের গবেষণা পুকুরে।
ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. খলিলুর রহমান বলেন, মেকং জায়ান্ট পাঙ্গাস। এটা মেকং নদীর একটা মাছ। মেকং নদীর চীন, লাউস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম হয়ে এটা ইয়োলো সাগরে পড়েছে।
সেই নদী থেকে এই মাছটি নিয়ে এসেছিলেন ত্রিশালের রেনি ফিসারিজের কর্ণধার রেজা আলী। উনি আমাকে ৫০টি মাছ দিয়েছিলেন। এ মাছ গবেষণা করে পোনা উৎপাদন করার জন্য।
রাষ্ট্রীয় এই মাছ গবেষণার আতুঁড় ঘরে এখন ১৭ বছর বয়সি ৪৭টি পাঙ্গাস আছে। যাদের ওজন ১শ থেকে দেড়শো কেজি। গবেষণা বলছে, এই মাছ তার জীবনকালের ১৭ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত বছরে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ডিম দেয়।
বিজ্ঞানীদের দাবি, মেকং পাঙ্গাস মহাবিপন্ন তালিকায় থাকা একটি মাছ। যার সংরক্ষণ ও প্রজনন শুধু দেশের জন্য নয় সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রাপ্ত বয়সে সুষম খাবার নিয়ম মেনে দেয়ার তাগিদ তাদের।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক আরও বলেন, এটা বাংলাদেশে ১০০ কেজি ওজন হলে প্রতিদিন ৫ কেজি খাবার দিতে হবে। এটাকে পানি উঠানামা করা এর প্রোটিন মাফিক খাবার দেয়া, প্রতিদিন খাবার দেয়া এবং এর পানির কোয়ালিটি যাতে ভালো থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন সম্ভব হলে, এই পোনা মাত্র ১ বছরে ৯ থেকে ১২ কেজি ওজনের হয়। যা দেশি পাঙ্গাসের তুলনায় ৬ গুণ বেশি বাড়ে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রিজভী আহমেদ বলেন, প্রথম দিকে এটা কার্নিভাস থাকলেও এক বছর পর তারা তৃণভোজি হয়ে ওঠে।
এরা নদীতে পেরিফাইডন, শ্যাওলা এবং পাথরে গায়ে নিমজ্জিত শ্যাওলা খেয়ে জীবনধারণ করে। তাই আমি মনে করি আফ্রিকান মাগুরের মতো এই মাছটা ক্ষতিকর হবে না।
আরো পড়ুন: ফুলকপি চাষে ৫০ হাজার টাকা খরচে মুনাফা দেড় লাখ
মাছটিকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে বলে দাবি বিএফআরআইয়ের বর্তমান মহাপরিচালকের। আশা করছেন, প্রজননে সফল হলে চাষীর পুকুর থেকে ভোক্তার পাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
বিএফআরআইয়ের বর্তমান মহাপরিচালক বলেন, বিস্তর কাজ এখনো বাকি আছে। আমরা মূলত যে কাজটি করতে যাচ্ছি পুকুরে এটি লালন-পালন করে, ডমিস্টিকেশন করে হ্যাচারিতে এর পোনা উৎপাদন করা।
আমরা আশা করি আগামী তিন থেকে চার বছর পর আমরা কৃত্রিম উপায়ে সেটা প্রজনন করা চেষ্টা করব। বর্তমানে পাঙ্গাসের উৎপাদন সাড়ে ৪ লাখ টন। তবে এই মাছ থেকে পোনা মিললে মাছে নতুন বিপ্লবের সূচনা হবে।
এসি/ আই.কে.জে