ছবি: সংগৃহীত।
সাত বছর আগে চীনের সাথে বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করে নেপাল। এ চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে সাতটি চীনা বন্দরে প্রবেশাধিকার লাভ করে দেশটি।
২০১৬ সালের এপ্রিলে, নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি চীনে সরকারি সফরে যান। সেখানে নেপাল ও চীন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তির ফলে চারটি চীনা সমুদ্রবন্দর, তিয়ানজিন, শেনজেন, লিয়ানউনগ্যাং ও ঝানজিয়াং এবং একইসাথে তিনটি স্থলবন্দর, লানঝো, লাসা এবং শিগাৎসে তে প্রবেশাধিকার লাভ করে নেপাল।
এ চুক্তি নেপাল ও চীনের মধ্যে ট্রানজিট পয়েন্টের মাধ্যমে নেপালকে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির অনুমতিও প্রদান করে।
দুই পক্ষই এই ট্রানজিট বাণিজ্যের ব্যাপারে সন্তুষ্ট ছিলেন। ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল, স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী প্রোটোকল তৈরি করতে দুই কর্তৃপক্ষকে আলোচনা শুরু করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালের এপ্রিলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী চীন সফরে আসেন। সেখানে ভাণ্ডারী এবং শি জিনপিংয়ের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনার পর ট্রানজিট এবং পরিবহন চুক্তি বাস্তবায়নের প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়।
নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গাওয়ালি এবং চীনের পরিবহনমন্ত্রী লি জিয়াওপেং চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
তবে নেপালের শিল্প, বাণিজ্য ও সরবরাহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান বিগত সাত বছরে দুই দেশের মধ্যে একটি চালানও সম্পন্ন হয়নি৷ প্রোটোকল বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার পর চীনকে একটি সভা আহ্বানের জন্য অনুরোধ করে নেপাল। কিন্তু চীনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি।
বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তির দ্বারা চীন থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে কাজাখস্তানের পেট্রোলিয়াম পণ্য আনার চিন্তা করেছিল নেপাল।
কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের পর খুব কম পরিমাণেরই পেট্রোলিয়াম পণ্য পেয়েছে নেপাল এবং তাও খুব শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যায়।
প্রোটোকল স্বাক্ষরের কয়েক মাস পরেই কোভিড পরিস্থিতি চীনের সাথে সমস্ত বাণিজ্য সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়।
চীনা বন্দরগুলো ব্যবহারের ব্যাপারে চীনের সাথে আবারও আলোচনার কথা ভাবছে নেপাল। তবে বৈঠকের জন্যে কোনও তারিখ এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয় নি।
চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে বিআরআই সদস্য দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য করতে পারবে বলে আশা করেছিল নেপাল।
২০১৬ সালে, অলির চীন সফরের সময়, উভয় পক্ষই বিদ্যমান সীমান্ত এলাকার সাথে আন্তঃসীমান্ত অর্থনৈতিক সহযোগিতা অঞ্চল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
প্রাক্তন বাণিজ্য সচিব পুরুষোত্তম ওঝা জানান, বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তিতে প্রোটোকল স্বাক্ষরের চার বছর পরেও একটি চালান আসেনি।
কোভিডের পর থেকে নেপাল ও চীনের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও কমে গিয়েছে। নেপাল-চীন সীমান্তের দুইটি প্রধান বাণিজ্য পয়েন্টও প্রায় সময়ই বন্ধ ছিল।
তবে এ ধরনের চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা আবশ্যক। গত চার বছরে কোনো পররাষ্ট্র বা বাণিজ্য মন্ত্রী প্রোটোকল বাস্তবায়নের বিষয়ে তেমন কোনও আগ্রহ দেখান নি। এ চুক্তির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত কর্মকর্তারা চুক্তির মন্থর গতিকে হতাশাজনক বলে ব্যক্ত করেছেন।
প্রাক্তন যুগ্ম সচিব রবি সাইঞ্জু চীনা কর্মকর্তাদের সাথে একাধিকবার আলোচনায় বসেছেন। তবে কোন ধরনের ইতিবাচক ফলাফল তিনি পান নি।
তিনি জানান, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জোর প্রদান করেনি এবং অন্যদিকে বেসরকারি খাতের আস্থা বৃদ্ধিও করতে পারে নি। ফলে বেসরকারি খাত চীন থেকে চালান আনতে প্রস্তুত নয়।
এমএইচডি/ আই. কে. জে/
আরো পড়ুন:
খবরটি শেয়ার করুন