আজ বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবস। সারা বিশ্বে এ দিনটি পালিত হয় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করেন পর্যটন খাতের সংশ্লিষ্টরা। এ বছর পর্যটন দিবস উপলক্ষে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’।
পর্যটন শিল্পের যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ শিল্পের প্রসারে সরকার নিরলস কাজ করছে বলে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা নির্ধারিত এবারের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথার্থ হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়-পর্বত, গহীণ অরণ্য, জীব-বৈচিত্র্য, সমুদ্র-সৈকত, নদ-নদী, বৈচিত্র্যময় আদিবাসী সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ ও গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, অতিথিপরায়ণ মানুষ অর্থাৎ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো পর্যটককে আকৃষ্ট করার মত সব উপকরণই বাংলাদেশে বিদ্যমান।
পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে স্থানীয় জনসাধারণকে পর্যটন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে টেকসই পর্যটন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব জানিয়ে ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৩’-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনে নানা ধরনের আয়োজন করেছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে। এই উৎসবের উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (ইউএনডব্লিউটিও) এ বছর দায়িত্বশীল, টেকসই এবং সর্বজনীন পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। এ বছর বিশ্ব পর্যটন সংস্থা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সৌদি আরবে। এ আয়োজনে যোগ দিতে সৌদি আরবে গিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। ইউএনডব্লিউটিও’র সদস্য দেশগুলো এ আয়োজনে অংশ নেবে।
ইউএনডব্লিউটিও’র সেক্রেটারি-জেনারেল জুরাব পোলোলিকাশভিলি বলেছেন, পর্যটনের সম্ভাবনা বিশাল। তাই এই বিশ্ব পর্যটন দিবসে আমরা পর্যটনের বিকাশের ক্ষমতাকে উদযাপন করি।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দিনের শুরুতেই সকাল সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে থেকে র্যালি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ট্যুরিস্ট-ভেসেল, ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণ করবে। দেশব্যাপী পর্যটনের বিভিন্ন অফারও থাকবে এ উৎসবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ‘চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফেস্টিভালে ২০টি হোটেল রিসোর্ট এবং অঞ্চলভিত্তিক খাবারের স্টল থাকবে ৭০টি। বিদেশি দূতাবাসসহ ১৬০টির বেশি প্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করছে। এ উৎসবে থাকবে বিভিন্ন দেশের খাবারসহ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের। দেশি-বিদেশি ইউনিক ও অথেন্টিক খাবার সম্পর্কে জানার এবং উপভোগ করার সুযোগ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘ফেস্টিভ্যালে দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে থাকবে জামতলার সাদেক গোল্লা, নরসিংদীর নকশি পিঠা, নাটোরের কাঁচা গোল্লা, কুষ্টিয়ার কুলফি, পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি, বাকরখানি, মুক্তাগাছার মন্ডা, চট্টগ্রামের মেজবান, খুলনার চুইঝাল, বিসমিল্লাহর কাবাব, কুমিল্লার রসমালাইসহ ৬৪টি জেলা থেকে ৭০টির বেশি ঐতিহ্যবাহী ফুড স্টল থাকবে। এ উৎসবে তাঁত ও জামদানি তৈরির প্রক্রিয়া দেখা যাবে। আমাদের ঐতিহ্য মসলিন পুনরুদ্ধার হওয়ার গল্প এবং মসলিন তৈরির প্রক্রিয়া প্রদর্শন করা হবে। আমাদের সবার মসলিন দেখার অপূর্ব সুযোগ তৈরি হবে এই উৎসবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, দর্শনার্থীদের আকর্ষণীয় ট্যুর প্ল্যান তৈরি করতে এ উৎসব সহায়তা করবে। তারা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাকীর্তি, পর্যটন-সম্পদ সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রতিটি জেলার পর্যটন বিষয়ে আকর্ষণীয় ছবি দেখার সুযোগ পাবেন।
একে/ আই. কে. জে/