ছবি: সংগৃহীত
যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখনই ভগবান শ্রী বিষ্ণু নিজেকে প্রকাশ করে সাধুদের পরিত্রাণ, দুষ্কৃতীদের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য যুগে যুগে ধরাধামে অবতীর্ণ হন। দ্বাপর যুগে ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার রূপে মথুরায় যাদব বংশে দেবকী এবং বাসুদেবের সন্তান রূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
শ্রীকৃষ্ণকেই ভগবান শ্রী বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার হিসাবে গণ্য করা হয়। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ধরাধামে অবতীর্ণ হন। এই কারণে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণাষ্টমী তিথি হিন্দুদের কাছে খুবই পুণ্য তিথি। এই তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় বিষ্ণুর আশীর্বাদ পাওয়া যায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের দিনটিকে আমরা জন্মাষ্টমী নামে অভিহিত করে থাকি।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে জানা অজানা বিস্তারিত তথ্য
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পিতার নাম বসুদেব ও মাতার নাম দেবকী। তিনি পিতামাতার অষ্টম পুত্র। রাজা উগ্রসেনের পুত্র কংসের কারাগারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হন। পিতা বসুদেব শ্রীকৃষ্ণের জীবন বিপন্ন জেনে জন্মরাত্রেই দৈবসহায়তায় কারাগার থেকে তাঁকে গোকুলে যশোদা ও নন্দের কাছে রেখে আসেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের রাত ছিল গভীর অন্ধকার। তাঁর আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে বসুদেব দেখলেন শিশুটি চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ধারণ করে আছেন।
দেখে তিনি বুঝতে পারলেন জগতের মঙ্গলার্থে পূর্ণবৃক্ষ নারায়ণ তাদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন। বসুদেব করজোড়ে প্রণাম ও বন্দনার পর দেবকী প্রার্থনা করলেন। শ্রীকৃষ্ণ একজন সাধারণ শিশুর রূপ ধারণ করলেন। বাল্যকাল থেকেই কৃষ্ণ তাঁর অলৌকিক শক্তির প্রমাণ দিয়েছিলেন পুতনাবধ, দামবন্ধন লীলা, কলীয়দমন, গোর্বধন ধারণ প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। নিপীড়িত মানুষ মুক্তির আশায় কানুর তথা কৃষ্ণের অনুসারী হয়ে ওঠে এবং ক্রমান্বয়ে কংসবধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। অবশেষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংস রাজাকে বধ করেন।
১} ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয় ৩১১২ খৃস্টপূর্বাব্দে। তাঁর জন্ম হয় দ্বাপরযুগে।
২} শ্রীকৃষ্ণ হলেন বিষ্ণুর অষ্টম অবতার।
৩} মনে করা হয়, শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কে ভাই ছিলেন জৈন ধর্মের ২২তম তীর্থঙ্কর আরিশটা নেমিনাথ।
৪} পুরাণে কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণ শ্যামবর্ণা ছিলেন। তবে অন্য মতের প্রভেদ উল্লেখ পাওয়া যায় যে তাঁর গায়ের রং ছিল বর্ষার মেঘের মতো।
৫} জন্মের রাতেই শ্রীকৃষ্ণকে কংসের কারাগার থেকে গোকূলে নন্দের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি নন্দ ও যশোদার সন্তান হিসেবে বড় হতে থাকেন।
আরো পড়ুন: বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর অমীয় বাণী
৬} তাঁর মামা কংস আগে থেকেই জানতেন, যে কৃষ্ণই বড় হয়ে তাঁকে হত্যা করবে। আর সেই কারণেই কৃষ্ণের জন্মের আগেই দেবকী ও বসুদেবকে কারাগারে বন্দি করেন। তাঁর মামা দেবকীর গর্ভের একের পর এক সন্তানের জন্ম হওয়া মাত্রই তাদের সকলকে হত্যা করেন।
৭} শ্রীকৃষ্ণের শঙ্খের নাম ছিল পাঞ্চজন্য, গদার নাম ছিল কৌমুদকী, ধনুকের নাম ছিল সরঙ্গ ও তাঁর খড়গের নাম ছিল নন্দক।
৮} বসুদেব যখন ছোট শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বৃন্দাবন যাচ্ছিলেন তখন কারাগার আপনি আপনিই খুলে গেল। প্রহরীসহ সব জীব সেই রাতে ছিল গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। যমুনা বসুদেবকে যাওয়ার পথ করে দিল। প্রকৃতপক্ষে এই সবকিছুই কৃষ্ণের ভগবত্তা। [শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে (২/৮৮]
এসি/ আই. কে. জে/