শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসী কার্যক্রম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৩৯ অপরাহ্ন, ৬ই মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র শক্তিদের মধ্যকার ক্ষমতার লড়াই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তুলেছে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দুই দেশই এ অঞ্চলে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কাছাকাছি ছোট ছোট দেশগুলো চাপের মুখে রয়েছে। এ দেশগুলো চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গভীর নজরদারিতে রয়েছে।

তবে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী হিসেবে চীনকেই গণ্য করা যায়। এ দেশটি নিজেদের সুবিধা রক্ষার্থে যেকোন পন্থা অবলম্বন করতে পিছ পা হবে না। বিভিন্ন দেশে চীন তার নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে।এই লক্ষ্যে মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কায় নিজের অর্থায়নে নির্মাণ করেছে রাডার স্টেশন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত সংস্থা, ম্যাক্সার টেকনোলজিস, জানুয়ারিতে একটি স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করে যেখানে দেখা যায় মিয়ানমারের গ্রেট কোকো দ্বীপে পুনরায় নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে চীন এই কোকো দ্বীপ নিয়ে কী ধরনের পরিকল্পনা করছে তা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা।

চীন প্রায়ই গবেষণার কাজ বলে অন্যান্য দেশের সীমানা লঙ্ঘন করে দক্ষিণ চীন সাগরে তার জাহাজ পাঠায়। তাই চীনকে কোন ধরনের সুযোগ প্রদান করা অত্যন্ত বিপদজনক এবং বোকামির কাজ হবে।

চ্যাথাম হাউজের প্রতিবেদনে, ড্যামিয়েন সাইমন এবং জন পোলক ভারতকে সাবধান করে দিয়ে বলেন যে, গ্রেট কোকো দ্বীপের মাধ্যমে মিয়ানমারকে ব্যবহার করে চীন ভারতের নৌবাহিনীর উপর নজরদারি বাড়াতে পারে।

মিয়ানমারের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করা থেকে শুরু করে কোকো দ্বীপের রহস্য পর্যন্ত চীন কোন বড় ধরনের ষড়যন্ত্র করছে বলে সন্দেহ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে চীনের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে শুধুমাত্র এই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এর প্রতিবাদ করা উচিত।

ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র, শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলে চীনের রাডার স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। গোয়েন্দা সূত্র মতে, এ কাজের মাধ্যমে চীন ভারত মহাসাগরে তার আগ্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারে।

তবে চীনের সম্পর্কে এ সন্দেহগুলো অবশ্যই ভিত্তিহীন নয়। মাত্র কয়েক মাস আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গুপ্তচর বেলুন পাঠিয়েছিলো চীন।

শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবিত রাডার স্টেশনটি শুধুমাত্র ভারতীয় নৌবাহিনীর কার্যক্রমই নয়, কুদানকুলাম এবং কালপাক্কাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো দক্ষিণ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পদের উপরেও নজরদারি করার ক্ষমতা রাখে।

আরো পড়ুন: চীনের কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার পর নতুন সমুদ্র নীতি গ্রহণ জাপানের

কুদানকুলাম এবং কালপাক্কাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ভারতের পারমাণবিক শক্তির প্রধান উৎস। এ দুইটি পারমাণবিক শক্তির যেকোন ধরনের ক্ষতি ভারতের জন্য বিশাল হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

তাছাড়াও রাডার স্টেশনটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি, দিয়েগো গার্সিয়ার কার্যক্রমের উপরেও নজরদারি রাখতে সক্ষম। দিয়েগো গার্সিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল।

এই ঘাঁটির উপর যেকোন নজরদারি কার্যক্রম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

রাডার স্টেশন নির্মাণ এবং পরিচালনার সাথে চীনের সম্পৃক্ততা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উত্তেজনাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। 

১৯৮০ এর দশকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনির সাথে চীনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে। তখন থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল এক সময় মিয়ানমার চীনের নিজস্ব স্যাটেলাইট বা নিজস্ব অঞ্চল হয়ে উঠবে।

চীন মিয়ানমার জান্তার কাছে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র বিক্রি করে। আবার মিয়ানমারের বিভিন্ন বইয়ে চীনা সামরিক ঘাঁটির উল্লেখ রয়েছে। চীনের যদি কোন খারাপ উদ্দেশ্য না থেকে থাকতো তবে দেশটি শ্রীলঙ্কা এবং মিয়ানমারের সাথে তার সম্পর্ক প্রকাশ্যে স্বীকার করতো।

এম এইচ ডি/

ভারত মহাসাগর চীন

খবরটি শেয়ার করুন