ছবি: সংগৃহীত
যে হোটেলে খেতে পকেটের টাকাও খরচ করতে হবে না। বিল হিসেবে শুধু জানাতে হবে আজকের দিনে করা একটি ভালো কাজের কথা। কিন্তু যদি কোনো ভালো কাজ না করেন? তাতেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। বিনামূল্যে খেতে পারবেন। তবে শর্ত, পরদিন করতে হবে দুটি ভালো কাজ। ভাবছেন, এ আবার কেমন উদ্ভট হোটেল?
ব্যতিক্রমী এই হোটেলটির নাম ‘ভালো কাজের হোটেল’। সাজসজ্জা বলতে রাস্তার পাশের ফুটপাত লাগোয়া একটি সাদা রঙা ইটের দেওয়াল। যাতে লাল আর কালো কালিতে লেখা আছে হোটেলের নাম আর সেবা সম্পর্কিত কিছু তথ্য। সামনের ফুটপাতই বসার আসন। এই হোটেলে যে অতিথিরা খেতে আসেন তাদের জন্য এটিই সই। রাজধানীর কমলাপুর আইসিডি কাস্টম হাউস পেরিয়ে কয়েক কদম আগালেই চোখে পড়বে ভালো কাজের হোটেল। দুঃস্থ, অসহায় ও ছিন্নমূল শিশুদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে যার যাত্রা শুরু।
এই ব্যতিক্রমী হোটেলটি পেছনে কাজ করেছেন একদল তরুণ। ‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনের সদস্য তারা। ক্ষুধা ও অপরাধমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন দুঃস্থ মানুষের সেবায় কাজ করছে সংগঠনটি।
শনি থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় নির্ধারিত স্থানে খাবার নিয়ে পৌঁছে যান স্বেচ্ছাসেবকরা। রিকশাওয়ালা, স্টেশন কুলি, পথচারী কিংবা ভবঘুরে মানুষরা তাদের অতিথি। এদের মাঝে বিলিয়ে দেন খাবার। রাস্তার পাশের ফুটপাতে সারিবদ্ধভাবে বসে তৃপ্তি নিয়ে সেই খাবার খান সবাই।
খাওয়ার আগে কী ভালো কাজ করলেন তা জানান। কেউবা বৃদ্ধকে পথ পার হতে সাহায্য করেছেন, কেউবা অর্থ না থাকায় কাউকে বিনামূল্যে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। এখানে একবেলা খাবার খেয়ে খুশি ছিন্নমূল মানুষগুলো। এই উদ্যোগের কারণে রোজ একটি ভালো কাজের চেষ্টা করেন তারা।
ভালো কাজের হোটেলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আরিফুর রহমান। এই উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি জানান, ছোটবেলায় হুমায়ূন আহমেদের ‘সবুজ ছায়া’ নামের নাটকে দেখেছিলেন অভিনেতা জাহিদ হাসান প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করতেন। সেই ধারণা থেকে অনুপ্রেরণা পান তিনি। ২০০৯ সালে কিছু বন্ধু মিলে শুরু করেন সমাজসেবামূলক কাজ। যারই একটি অংশ এই হোটেল।
বর্তমানে রাজধানীর বনানী, তেজগাঁও ও কমলাপুরে রয়েছে ভালো কাজের হোটেলের শাখা। বাবুর্চিরা রান্না করার পর স্বেচ্ছাসেবকরা খাবার নিয়ে চলে যান নির্ধারিত স্থানে। অবশ্য শুক্রবারের কাজ থাকে একটু ভিন্ন। সেদিন তারা খাবার নিয়ে যান রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায়। সেখানে আসা নিম্ন আয়ের মানুষদের হাতে যেমন খাবার তুলে দেন, তেমনি এতিমখানায় গিয়ে এতিমদের কাছেও খাবার পৌঁছে দেন। প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন ব্যক্তিকে খাওয়ান তারা। কখনো কখনো তা ৩০০ এর ঘরও ছুঁয়ে থাকে।
অর্থের যোগান আসে কোথায় থেকে? জানা যায়, এই সংগঠনের প্রায় দেড় হাজার সদস্যই এই অর্থ দেন। প্রতিটি সদস্য রোজ ১০ টাকা করে জমা দেন। যা দিয়ে প্রতি মাসে প্রায়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এছাড়াও সংগঠনের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীরাও অর্থ অনুদান দিয়ে থাকেন।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের পুরাতন রেলস্টেশনে ভালো কাজের হোটেলের আরেকটি শাখা চালু হয়েছে। সেখানে প্রায় আড়াই হাজার সদস্য যুক্ত আছেন। তারা প্রত্যেকে মাসে ৩০০ টাকা করে জমান হোটেলের জন্য।