শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিরপুরের মুক্তিদাতা শহিদ সেলিম

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১২:৫৮ অপরাহ্ন, ২১শে মে ২০২৩

#

মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিকী ছবি

ডা. এম এ রহমান

মিরপুরের মুক্তিদাতা হিসাবে পরিচিত বীর যোদ্ধা শহিদ লে. সেলিমের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী ছিল ১৯ মে। ১৯৪৮ সালের এই দিনে যশোরের অভয়নগরে এক সম্ভ্রান্ত চিকিৎসক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শৈশব থেকেই গণিতে ছিল তার অসাধারণ মেধা। মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের আগে তিনি রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন। সেখানে তিনি কেবল একজন আপসহীন ছাত্রনেতাই ছিলেন না, অসাধারণ এথলেট ও কৃতি খেলোয়াড় হিসাবে কলেজ ও বিভাগীয় পর্যায়ের অধিকাংশ ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। ইনডোর ও আউটডোরের একাধিক গেমসে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন সেলিম।

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় প্রথম বছরই সেলিম হয়েছিলেন কলেজ ছাত্র সংসদের সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক। পাশাপাশি জ্যাভলিন থ্রোতে আন্তঃকলেজ চ্যাম্পিয়নশিপে হয়েছিলেন প্রথম রানার আপ। ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে '৬৯ এর আন্দোলনে এবং '৭০ এর নির্বাচনে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। মানবিক গুণে, বন্ধুবাৎসল্যে রাজশাহীর মতিহারে সবার প্রাণের মণি হয়ে উঠেছিলেন সেলিম।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হাতেগোনা যে কজন উদ্বুদ্ধ বীর সরাসরি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে লে. সেলিম ছিলেন একজন। এরপর ১৩ এপ্রিল ১৯৭১-এ লালপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে যুদ্ধে যোগদান করেন সেলিম ও তার ভাই আনিস। এ যুদ্ধে প্লাটুন কমান্ডার হিসাবে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন সেলিম। ১৪ এপ্রিল বিকালে পাকিস্তানি বাহিনি জল, স্থল ও আকাশপথে আক্রমণ শুরু করলে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে শাহবাজপুর ফিরে আসেন। এরপর শাহবাজপুর, নাসিরনগর, শাহজিবাজার, তেলিয়াপাড়াসহ অসংখ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন সেলিম ও আনিস ভ্রাতৃদ্বয়।

৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২ অবরুদ্ধ মিরপুর মুক্ত করতে তাকে মিরপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি অসম ও অতর্কিত যুদ্ধে প্রাণ দেন লে. সেলিম। মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণাঙ্গন মিরপুর মুক্ত করতে গিয়ে বীরের মতো যুদ্ধ করতে করতে আরও ৪১ জন সেনাসদস্যসহ শহিদ হন এই যোদ্ধা। মৃত্যুর পর ঘাতক কর্তৃক খণ্ডবিখণ্ডিত হয়ে এই যোদ্ধা দেশের ধূলিকণার সঙ্গে মিশে যান। তার হাড়গোড়ের কথিত ভগ্নাংশ রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় সম্মানে সমাধিস্থ করা হয় বনানী সেনা কবরস্থানে। সেলিমের মৃত্যুর পর কয়েক টুকরা হাড় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার পরিবারকে। চেনা যায় না, বোঝা যায় না এমন হাড়ের স্তূপ দেখতে চাননি লে. আনিস (ডা. এম এ হাসান)। ক্যান্টনমেন্টের দাফনকৃত ওই হাড়ের নমুনার সঙ্গে তার বাবার দাঁত, মায়ের রক্ত ও চুলের ডিএনএ'র মিল পায়নি ফরেনসিক এনথ্রোপলজি নিয়ে কাজ করা ডা. হাসান।

আরো পড়ুন: ‘অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বিদেশি কূটনীতিকদের ভালো নিরাপত্তা দেয়’

সেলিমের মৃত্যুর পর আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি, স্তুতি এবং অনেক কিছু ছিল। কিন্তু এর কিছুই যেমন শহিদ সেনাদের ছুঁতে পারেনি, তেমনি তা তাদের পরিবারের ধরাছোঁয়ায় আসেনি। এই বীরকে সম্মানিত করে জাতি হতে পারে সম্মানিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন ভূমিকা এখনো রাখতে পারেন - এটা তার পরিবারের আশা। এটা হতে পারে এই শহিদের জন্মদিনে শ্রেষ্ঠ উপহার।

ডা. এম এ রহমান, আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, বাংলাদেশ।

এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/

মুক্তিযুদ্ধ মিরপুর

খবরটি শেয়ার করুন