হুমায়ূন আহমেদ - ছবি: সংগৃহীত
তরুণ থেকে বৃদ্ধ, সব
বয়সের পাঠকের হৃদয় জয়
করতে পারা লেখকের কথা
আসলেই যার নামটি সবার
আগে আসে তিনি হুমায়ূন
আহমেদ। উপন্যাস, ছোটগল্প,
নাটক, চলচ্চিত্র ও গানসহ সৃজনশীলতার
প্রায় প্রতিটি শাখায় তার সৃষ্টি
স্মরণীয় হয়ে রয়েছে বাঙালির
হৃদয়ে। কথার জাদুতে
মুগ্ধ করে ধরে রাখা
তার মতো করে আর
কেউ পারেনি। এজন্যই
হয়তো তাকে কথার জাদুকর
বলা হয়।
প্রখ্যাত
এ ঔপন্যাসিকের আজ (১৯ জুলাই)
মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের
আজকের এই দিনে ক্যানসারের
সঙ্গে লড়াই করে না
ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাকে হারানোর
শোক এখনো বাংলাভাষী পাঠকদের
মনে। তিনি বেঁচে
আছেন অগণিত পাঠকের মনে। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে
ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে নানা অনুষ্ঠানে তার ভক্ত-শুভার্থীরা কামনা করেছিলেন তিনি সুস্থ
হয়ে ফিরে আসবেন বাংলাদেশে। কিন্তু মানুষের সেই প্রার্থনা পূরণ হয়নি। তিনি চলে গেছেন
না ফেরার দেশে। হুমায়ূন নেই কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন লক্ষ পাঠকের হৃদয়ে।
মৃত্যুর ১১তম বার্ষিকীতে হুমায়ূনতীর্থ গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে আজ তাঁর সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবেন অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। আসবেন হুমায়ূনের স্বজন, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও প্রকাশকরাও। আছে কোরআন খতম, দোয়া মাহফিল ও এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচি। জন্মস্থান নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরেও নানা কর্মসূচিতে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করা হবে।
হুমায়ূন আহমেদ - ছবি: সংগৃহীত
হুমায়ূন
আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩
নভেম্বর কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ কর্মকর্তা
ফয়জুর রহমান আহমেদ ও
মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম
সন্তান তিনি। তিন
ভাই দুই বোনের মধ্যে
তিনি সবার বড়।
খ্যাতিমান লেখক শিক্ষাবিদ ড.
মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর
অনুজ। ছোট ভাই
আহসান হাবীব নাম করা
কার্টুনিস্ট ও রম্য লেখক।
শুধু গল্প-উপন্যাসেই যে
হুমায়ূন তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, এমন নয়।
তিনি একাধারে ছিলেন চলচ্চিত্রকার, টিভি
নাট্যকার, গীতিকার। তাঁর
লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে– নন্দিত
নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন,
জোছনা ও জননীর গল্প,
কবি, লীলাবতী, গৌরীপুর জংশন, এইসব দিনরাত্রি। তাঁর পরিচালিত
চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে– আগুনের
পরশমণি, দুই দুয়ারী, শ্রাবণ
মেঘের দিন, শ্যামল ছায়া,
আমার আছে জল, নয়
নম্বর বিপদ সংকেত, ঘেটুপুত্র
কমলা। তাঁর লেখা
জনপ্রিয় টিভি নাটকের মধ্যে
আছে– এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়,
বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই
ইত্যাদি।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ হুমায়ূন পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। এ ছাড়াও পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার।
আরো পড়ুন: শিল্পকলায় জামদানি উৎসব শুরু আজ
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে
হুমায়ূন আহমেদের শরীরে মারণব্যাধি ক্যানসার
ধরা পড়ে। এরপর
তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। শারীরিক
অবস্থার অবনতি হলে ২০১২
সালের ১৬ জুলাই তাকে
লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময়
রাত সাড়ে ১১টায় তিনি
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
চারদিন পর ২৩ জুলাই
তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে
আনা হয়। এরপর
২৪ জুলাই তাকে দাফন
করা হয় তার গড়ে
তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।
এম/