ছবি-সংগৃহীত
বগুড়ায় সাদা মনের মানুষ বা ‘সাঁকো বন্ধু’ বললেই এক নামে চেনে সবাই তাকে। তিনি বিপদে আপদে মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেন। শুধু তাই না ছোট নদী বা খাল পারাপারের জন্য যিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে তৈরি করেছেন ৬০০ টিরও অধিক সাঁকো। রাস্তার ধারে লাগিয়েছেন এক লাখেরও বেশি তালবীজ।
তিনি হলেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার দিগদাইড় গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী জাহিদুল ইসলাম মোল্লা। তিনি ঐ গ্রামের মোবারক আলী মোল্লার ছেলে। সাদা মনের মানুষ জাহিদুল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এরই মধ্যে বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও একটি মোটরসাইকেল।
জাহিদুল ইসলাম জানান, তার বয়স যখন ১০/১২ বছর তখন প্রতিনিয়তই তাকে খাল পাড় হয়ে স্কুলে যেতে হতো। নৌকা সময়মতো না থাকায় দারুণ কষ্ট পেতে হয়েছে তাকে। শুধু তাই না, তার মতো অনেক ছোট ছেলেমেয়েদেরও নৌকা পারাপারে অসুবিধা হতো।
তখন তিনি চিন্তা করলেন বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানানোর। যেই কথা সেই কাজ। বড়দের সহায়তা নিয়ে বাঁশ দিয়ে তৈরি করে ফেললেন সাঁকো। সেটিই ছিল তার প্রথম সাঁকো তৈরি।
এরপর থেকেই তিনি এলাকায় পারাপারের অসুবিধা যেখানেই হতো সেখানেই গিয়ে বড়দের সহায়তা নিয়ে সাঁকো তৈরি করতেন। প্রায় ৪৫ বছরের সাঁকো তৈরির জীবনে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে ৬০০ এর অধিক সাঁকো তৈরি করেছেন।
জাহিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘সাঁকো তৈরি করতে করতে বিভিন্ন জায়গায় পরিচিতি পাই। এখন অনেক জায়গায় সাঁকোর প্রয়োজন হলে আমাকে খবর দেয়। বিনা পারিশ্রমিকে আমি গিয়ে সাঁকো তৈরি করে দিয়ে আসি। অনেক দূর দূর থেকে আমাকে ডাকে এ কাজে।
তারা মূলত অনুপ্রেরণা পেতে ডাকে। আমি গিয়ে গ্রাম ঘুরে ঘুরে সামর্থ্যবানদের থেকে বাঁশ, কাঠ সংগ্রহ করে সাঁকো তৈরির কাজ করি। সাঁকো তৈরিতে মানুষের সাময়িক কষ্ট লাঘব হয়। এরপর তা যখন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে তখন তারা সেখানে ব্রীজ তৈরি করে দেয়’।
মানুষের পারাপারের কষ্ট দুর্ভোগের কথা শুনলেই জাহিদুল তার পুরোনো সাইকেল নিয়ে কাধে দুইটা লম্বা বাঁশ নিয়ে চলে যান সাঁকো তৈরির কাজে। বিভিন্ন এলাকায় মানুষ তাকে সাঁকো বন্ধু জাহিদুল বলে চিনতে শুরু করলো। তখনি তিনি নজরে আসলেন দেশের কিংবদন্তি উপস্থাপক হানিফ সংকেতের। এরপর তিনি জাহিদুলকে নিয়ে গেলেন দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদিতে’। তার কাজের গতি বাড়াতে তাকে উপহার দিলেন একটি মোটরসাইকেল।
শুধু যে তিনি সাঁকো বন্ধু তা নন। তিনি একজন সমাজ সচেতন বৃক্ষপ্রেমীও বটে। তাইতো তিনি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মসজিদের রাস্তাসহ বিভিন্ন সড়কের ধারে এক লাখের বেশি তালের বীজ রোপন করেছেন।
আরো পড়ুন: ভিসা নীতি সরকার, বিরোধী দল ও নিরাপত্তা সংস্থার ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য : ডোনাল্ড লু
দিগদাইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক টুল্লু বলেন, ‘জাহিদুল আমাদের গ্রামের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সে সৎ। গ্রামের মানুষের বিপদে আপদে তাকে পাশে পাওয়া যায়। গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য অসংখ্য সাঁকো তৈরি করে দিয়েছে’।
জাহিদুল ইসলামের ইচ্ছা তিনি শেষ জীবন পর্যন্ত মানুষের সেবায় কাজ করে যেতে চান। তিনি জানান দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে তাকে ডাকলে তিনি ছুটে যাবেন মানুষের সেবায় এবং তা বিনা পারিশ্রমিকে।
এসি/ আই. কে. জে/