ছবি : সংগৃহীত
এবার দেড় হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক স্পর্শ করলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। এর আগে এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করতে তার সময়ে লেগেছিল ১৪ বছর। তবে এরপর আরও ৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করতে তার সময় লেগেছে ২৬ মাস। বিগত ১৬ বছর ধরে বিনামূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করে আসছেন মানবিক এই চিকিৎসক। তার প্রতিস্থাপনের সফলতার পরিমাণ ৯৫ শতাংশের বেশি।
বৃহস্পতিবার (২৮শে ডিসেম্বর) সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে রাত ১২টায় ১৫০০তম কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে শেষ করেন তিনি।
কামরুল ইসলামের এই ১৫০০তম কিডনি প্রতিস্থাপিত রোগীর নাম মো. শহিদুল। তার বয়স ২৭ বছর। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের পূর্ব ছিলার চর। আর কিডনিদাতা তার নিজের বাবা তারামিয়া আকন (৪৮)।
গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে একটি কিডনি প্রতিস্থাপনেও নেননি পারিশ্রমিক। এছাড়া এসব রোগীদের প্রতিস্থাপন পরবর্তী সব ফলোআপ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও রোগীর আমৃত্যু দিতে হয় না কোনো ফি। এছাড়া রোগীর পরামর্শ ফি নিয়ে থাকেন ৪০০ টাকা।
শুরুটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল জানিয়ে ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিস্থাপন সফল করতে পারবো কি না, ব্যর্থ হলে মানুষ আমাকে কীভাবে গ্রহণ করবে এসব নিয়ে টেনশন কাজ করতো। তাই অপারেশনের সময় আমি অনেক দোয়া পড়ি, আল্লাহর সাহায্য চাই। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া এতদূর আসা সম্ভব হতো না।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটির শুরুর দিকে মাসে দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন করলেও বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে পাঁচটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে একটি টিম নিয়ে কাজ করায় দক্ষতা অনেক বেড়েছে। এতে করে প্রতিস্থাপনের সংখ্যা যেমন বেড়েছে সাকসেস রেটও বেড়েছে।
পারিশ্রমিক না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যিনি যে পেশায় নিয়োজিত আছেন তাকে সে পেশার মাধ্যমেই মানুষকে উপকার করা উচিত। এর বাইরে গিয়ে তো করার প্রয়োজন পড়ে না। রোগীরা অনেক অসহায় হয়ে আমাদের কাছে আসেন। দরিদ্র রোগী যেমন আসেন, সামর্থ্যবানরাও আসেন। চাইলে পাঁচ লাখ টাকা দেবে, এমন লোকও আছে। তবে আমি আসলে রোগীদের মধ্যে তফাৎ করতে পারি না। তবে এর ফলে যে আমি চলতে পারছি না, তা কিন্তু না। আল্লাহ আমাকে অনেক দিক দিয়ে অনেক দিয়েছেন। উপকারে ক্ষতি হয় না।
নিজের পারিশ্রমিক ছাড়া এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেশ-বিদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এরপর দায়িত্ববোধ যেন আরও বেড়ে যায়। মাত্র ২৬ মাসে আরও ৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করে নিজের রেকর্ড ভাঙেন।
আরো পড়ুন : জরায়ুতে টিউমার আছে কি না বুঝবেন যে লক্ষণে
পরিবার ছাড়া কিডনি না দিতে পারার যে বিধান তা যথাযথ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রান্সপ্ল্যান্টের ক্ষেত্রে দেখা যায় মায়া-মহব্বত ছাড়া কেউ তো আর কাউকে দিতে চায় না। এখনকার পরিবারগুলোও ছোট হয়ে আসছে। এখন নিজের পরিবার ছাড়া তো কিডনি দিতে চায়ও না কেউ। আবার অনেকে দিতে পায়। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে পরিবার বড় থাকে। মায়া-মহব্বত ও বেশি থাকে, তাদের ক্ষেত্রেই দেখা যায় একজন আরেকজনকে কিডনি দিয়ে থাকে।
রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও মানুষের অসহায়ত্ব ঘুঁচাতে তিনি এখন সপ্তাহে পাঁচটি প্রতিস্থাপন করছেন। নিজ হাতে গড়া সিকেডি অ্যান্ড ইউোরোলজি হাসপাতালের রেকর্ড বলছে, প্রতিস্থাপনের পর এক বছর কিডনি সচল থাকার হার ৯৪ শতাংশ। তিন বছর পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ, পাঁচ বছর পর্যন্ত ৭২ শতাংশ এবং ১০ বছর পর্যন্ত কিডনি সচল বা সুস্থ থাকার হার ৫০ শতাংশ। তরুণদের কিডনি দানের হার বেশি হলে গ্রহীতারা আরও দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকতে পারতো বলে মত অধ্যাপক কামরুল ইসলামের।
সফল প্রতিস্থাপনের পরও ফলোআপ, পরীক্ষা নিরীক্ষায় খরচ চালাতে না পারায় অনেকে মৃত্যুর শিকার হন। সেদিক বিবেচনায় সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে প্রতিস্থাপন করা প্রতিটি রোগীর আমৃত্যু বিনামূল্যে ফলোআপ ও পরীক্ষা- নিরীক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন কামরুল ইসলাম।
শুধু প্রতিস্থাপন নয়, উপযুক্ত ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন তৈরিতে অধ্যাপক কামরুল ইসলামের জুড়ি নেই বলে জানান ১৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপনের সাক্ষী সার্জন ডা. তপন।
এক হাতে দেশের এক-তৃতীয়াংশ কিডনি প্রতিস্থাপনের পর এখন হাসপাতালের পরিসর বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি। প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বাড়াতে আগামীতে ক্যাডাভারিক বা ব্রেইন ডেথ রোগীর শরীর থেকে কিডনি নিয়ে তা প্রতিস্থাপনের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন এই চিকিৎসক।
এস/ আই. কে. জে/