ছবি-সংগৃহীত
ঐতিহ্যবাহী কালাইরুটির জন্ম উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিয়্যাড়ে। গ্রামবাংলার জনপ্রিয় এই খাবার এখন শুধু গ্রামবাংলা আর চরাঞ্চলের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়। সেখানকার গণ্ডি পেরিয়ে এসেছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।
প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট আর মিনারেলসমৃদ্ধ কালাই রুটি তৈরি হয় মাষকালাই আর চালের আটার সংমিশ্রণে। যা শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী।
বর্তমান সময়ে বিদেশি খাবার যতই মুখোরোচকে হোক না কেন, ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবারের প্রতি বাঙালির আকর্ষণ স্বভাবতই বেশি। আর সেটা যদি কালাই রুটি হয়; তবে তো কোনো কথাই নেই।
শীত মৌসুমে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় হাঁটবাজারগুলোতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কালাইয়ের রুটি বিক্রির ধুম পড়ে। খেতে সুস্বাদু, তাই কুষ্টিয়া অঞ্চলে এ কালাইয়ের রুটি খুবই জনপ্রিয়। সুস্বাদু খাবার হিসেবে কালাই রুটি ভোজনরসিকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
মরিচ বাটা, পেঁয়াজ কুচি বা সরষের তেল দিয়ে বেগুন ভর্তার সঙ্গে গরম কালাই রুটি মানুষের কাছে একটি প্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত। শীতের আগমনে সুস্বাদু কালাই রুটির দোকান গড়ে উঠেছে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে।
অস্থায়ীভাবে ফুটপাথের পাশে গড়ে উঠা এসব দোকানের বেচাবিক্রিও বেড়েছে বেশ। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কালাই রুটি খেতে আসছেন ফুটপাথের এসব দোকানে। সুস্বাদু কালাই রুটির মূল ভোক্তা শ্রমজীবী মানুষ, ক্ষুদে ব্যবসায়ী এবং নিম্ন আয়ের কর্মচারী। এমনকি ধনী লোকদেরও সখের বসে খেতে দেখা যায়।
প্রথমে মাষকালাই ও আতপ চাল পাটাতে বা জাঁতায় পিষে আটা বানানো হয়। মেশিনে তৈরি আটা দিয়ে কালাই রুটি বানানো গেলেও পাটায় পিষ্ট আটা দিয়ে কালাই রুটির স্বাদ বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে স্বাদমতো লবণ ও প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি মিশিয়ে খামি তৈরি করা হয়। এর থেকে ছোট বল পরিমাণ আটা নিয়ে গোলাকার করা হয়।
পরে দুই হাতের তালুতে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বড় রুটি বানানো হয়। সাধারণত গমের রুটির চেয়ে কালাই রুটি অধিক পুরু এবং বড় হয়। এরপর রুটি মাটির তাওয়ায় সেঁকে গরম করা হয়।
রুটির রঙ বাদামি হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলা হয়। কালাই রুটির সঙ্গে সাধারণত বেগুন ভর্তা, শুকনো মরিচ ভর্তা, বট, পেঁয়াজ ভর্তা, মাংস ভুনা প্রভৃতি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
কুষ্টিয়া অঞ্চলের জনপ্রিয় কালাইয়ের রুটি বিক্রি করে অনেক নারীর জীবনজীবিকার নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রতি সন্ধ্যা রাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রুটি বিক্রি করে থাকেন।
নারী ব্যবসায়ী আমেনা খাতুন জানান, কালাইয়ের রুটি খেতে সবজি লাগে না, চিনি, গুড়, কিংবা মিষ্টি লাগে না, প্রয়োজন হয়না গোশতেরও। রুটি ব্যবসায়ীর থালা বাসনেরও প্রয়োজন হয় না। ক্রেতারা রুটি হাতের ওপর নিয়ে খেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। প্রতিদিন রাতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি হয়। লাভও হয় ৬০০-৭০০ টাকা।
আরো পড়ুন: রাতে কম খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রুটি বিক্রি হয় ভেড়ামারা রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, শহরের চার রাস্তা মোড়, রেলওয়ে উত্তর ও দক্ষিণ রেলগেট ও উপজেলা চত্বরে। প্রতিটি রুটি ৩০ টাকা।
এসি/ আই. কে. জে/