প্রিয় পরসমনি,
তোর চিঠি পেয়েছি বেশ কদিন হলো। কিন্তু উওর দিতে অনেক দেরি হয়ে গেলো। আসলে আমার মনটা অনেক খারাপ। কিছুদিন আগে আমাদের ক্লাসের একটি ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ও আমার তেমন ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলো না। তারপরেও ওকে আমি কেন জানি ভুলতে পারছি না। ওর নাম ছিল স্পর্শ। তোকে বলেছিলাম মনে হয়, ক্লাসের সবাই ওকে ‘পেন্সিল’ বলে ক্ষ্যাপাতো।
যাই-হোক, ঘটনার দিন সকাল বেলা স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছি। স্পর্শ আর আমি এক জায়গা থেকে বাসে উঠতাম। বাসস্ট্যান্ডে ঐদিন অনেক লোক ছিল। স্পর্শ তখনও আসেনি। একটা বাস আসতেই সবাই হুড়মুড় করে উঠে পড়লাম। আগে থেকেই বাসটা ভর্তি ছিলো, এরপর আরও ভীড় হয়ে গেলো। আমরা কয়েকজন দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।
হঠাৎ দেখি, পিঠে ব্যাগ নিয়ে স্পর্শ ছুটে আসছে। বাসটা তখনও দঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু হঠাৎ যা হলো, স্পর্শ দৌড়ে এসে বাসের হ্যান্ডেল ধরে উঠতে না উঠতেই বাসটা ছেড়ে দিলো।
চোখের পলকে পা ফসকে ও পড়ে গেলো চাকার তলায়। এরপর শোনা গেলো মর্মান্তিক আর্তনাদ। ঝাঁকুনি দিয়ে বাস থেমে গেলো।
লোকজন ছুটে এলো, শুরু হলো হৈচৈ, চিৎকার। কোন ফাঁকে জানি ড্রাইভার পালালো দেখতেই পেলাম না। দেখলাম রক্তে লাশটা ভিজে গেছে, রাস্তা ভেসে গেছে রক্তে। পুলিশ এসে লাশটা নিয়ে গেলো হাসপাতালে। আমি নিথর! সবই দেখলাম, কিন্তু সবই অস্পষ্ট ঝাঁপসা। সত্যি এমন করুণ ও মর্মান্তিক দৃশ্য আমি জীবনেও দেখিনি। আজ সারাদিনই এ দৃশ্য আমার চোখে ভাসছে।
আমি কিছুতেই আগের স্পর্শকে মনে করতে পারছি না। কিছুতেই লেখাপড়ায় মন বসছে না। এ সময় তুই পাশে থাকলে ভালো হতো।
তোর আব্বু-আম্মুকে আমার সালাম এবং ছোট বোনকে স্নেহ দিস। আজ আর নয়। চিঠি লিখিস।
--- ইতি
তোর বান্ধবী
জান্নাত আরা সুকন্যা
যাত্রাবাড়ি, ঢাকা।
এস/ আই. কে. জে/
খবরটি শেয়ার করুন