ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নতুন ধারার সংবাদমাধ্যম জিটিওর সাংবাদিক মেহদি হাসানকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাক্ষাৎকারটি গতকাল সোমবার (২৯শে সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সুশীল সমাজ ও নেটিজেনদের মধ্যে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা-পর্যালোচনা চলছে।
বিশেষ করে, সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টার বলা 'এমন মানুষও আছেন যারা বলছেন ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন' বক্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। তারা নানা হিসাব-নিকাশ করছে। আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ড. ইউনূস পুরোপুরি সত্য বলেননি বলেও অভিযোগ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
ওই সাক্ষাৎকারে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যগুলো পুরোপুরি সত্য না বলে অভিযোগ করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোস্তফা ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে, দলটির প্রতীক স্থগিত আছে। এর মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দল যে নির্বাচনে অংশ নেবে সেই অধিকার আর তার থাকে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘ড. ইউনূস আওয়ামী লীগের বিষয়ে কিছু সত্য বলেছেন, কিছু অসত্য বলেছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে কোনো সময় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সচল করা হতে পারে। এ রকম যখন অবস্থান, তখন জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল নিষিদ্ধ করার যে দাবি, সেটি সম্ভবত ওই পর্যায়ে নাও যেতে পারে।’
জিটিওর সাক্ষাৎকারে মেহদি হাসান জানতে চান, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আপনার সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) তার দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে, তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে, যার ফলে কার্যত তাদের পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধা তৈরি হয়েছে। আপনার সহকর্মী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন, যাকে আপনি খুব ভালোভাবে চেনেন, তিনি লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন যে এটি কেবল পূর্ববর্তী সরকারের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে, যারা ক্ষমতায় এসে বিরোধীদের নিষিদ্ধ করেছিল। আপনি শুধু সেই চক্রের পুনরাবৃত্তি করছেন। অমর্ত্য সেন এবং অন্যদের এই সমালোচনার জবাবে আপনার কী বলার আছে?
প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি। এমনকি তাদের রেজিস্ট্রেশনও স্থগিত করা হয়নি। শুধু তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। যেকোনো সময় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সচল করা হতে পারে।
এদিকে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের উদ্দেশ্যে বলেন, রাষ্ট্র মানে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক চালানো নয়। তিনি (ইউনূস) গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বোঝেননি। এখন তিনি যে জায়গায় গিয়েছেন, এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সফল নির্বাচনের কোনো লক্ষণ দেখছি না। তিনি কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন দিচ্ছেন? ড. ইউনূসের যে জনপ্রিয়তার হ্রাস হয়েছে, এটা আমাদের জন্য বিপজ্জনক। আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’
ফরহাদ মজহার আরো বলেন, ‘আপনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) বললেন প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন; কিন্তু তা এখনো দেখানো হয়নি। প্রেসিডেন্টও জানেন না পদত্যাগপত্র কোথায়—এটা চলবে না। রাষ্ট্রের ১৭ কোটি মানুষকে সাথে নিয়ে তামাশা করা যায় না।’
প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্য তুলে ধরে মোস্তফা ফিরোজ তার ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিওতে বলেন, ‘তার মানে নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে বাদ দেওয়া সম্ভবত যাবে না। আমরা যেটা ধারণা করি, এটা পশ্চিমারা চান না। গণতান্ত্রিক বিশ্ব এটা সাপোর্ট করবে না যে আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে দূরে সরে যাবে। এখন কোন ফরমেটে যাবে বা এই নির্বাচনে যাবে কিনা; না গেলেও যাদের রাজনীতি তারা ভবিষ্যতে কীভাবে করতে পারে তার একটা নিশ্চয়তা সম্পর্কে কোনো একটা আলাপ আলোচনা চলছে।’
‘যেকোনো সময় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সচল হতে পারে’- প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্যের বিষয়ে মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘এই ঘোষণাটা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ সিগনিফিকেন্ট। কারণ ড. ইউনূস এখন যে দেশে আছেন বা যে বিশ্বে আছে, সেটা একটা পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব। সেখানে বলতে পারেন না যে, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হবে। তাকে কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না, অধিকার দেওয়া হবে না।’
প্রসঙ্গত, মেহদি হাসান সম্প্রচার সাংবাদিক, লেখক ও জেটিওর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আল জাজিরা টেলিভিশনের টক শো ‘হেড টু হেড’-এর উপস্থাপক। তার শোতে বিশ্বের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের তীক্ষ্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
খবরটি শেয়ার করুন