ছবি: সংগৃহীত
ভারতের তামিলনাড়ুতে সিনেমার নায়ক থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে ৩৯ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু বাংলাদেশেও সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোস্তফা ফিরোজের আশঙ্কা, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিলে বিপুল জনসমাগমের কারণে এমন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও রাজনৈতিক দলগুলোর এখনই জনসভা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে বহুদিন পর একটি উৎসবমুখর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শক্তি প্রদর্শন করবে, জনসভা করবে, ব্যাপক জনসংযোগ ঘটাবে। সেই ভিড়ে উসকানিদাতারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারে, এমনকি পদদলিত হওয়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশনের এখন থেকেই এ বিষয়ে ভাবা উচিত। বিশেষ করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের যুগে যদি বিশাল জনসভার আয়োজন অব্যাহত থাকে, তাহলে নানা ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়।’
আজ রোববার (২৮শে সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’-র এক ভিডিওতে মোস্তফা ফিরোজ এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। 'তারেক রহমান ফিরলে তামিলনাড়ুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না তো' শিরোনামে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। আজ রাত ১১টা পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি বার। এ সময়ের মধ্যে এতে মন্তব্য এসেছে ৩৫৫টি।
একইদিন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও দলটি থেকে বহিষ্কৃত নেতা গোলাম মাওলা রনি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা এক ভিডিওতে বলেন, 'শেখ হাসিনা খুব দ্রুত কিছু একটা করতে চাচ্ছেন। আগামী এক দেড় বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগে শেখ পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন করা না গেলে শেখ পরিবার আওয়ামী লীগ থেকে মাইনাস হয়ে যাবে। সাম্প্রতিক সময় শেখ হাসিনা ঘনঘন বৈঠক করছেন। তিনি নেতাকর্মীদের যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছেন এবং যেভাবে তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন, তা রীতিমতো আতঙ্কজনক।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন ঝটিকা মিছিল করছেন, বাইরের মানুষ তালি দিচ্ছেন। এখন সামাজিক মাধ্যমে শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ লাইক দিচ্ছেন, কমেন্ট দিচ্ছেন, শেয়ার দিচ্ছেন অথচ এই মানুষগুলো এক বছর আগে আওয়ামী লীগের বিরোধী ছিলেন।’ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা সম্প্রতি শেখ হাসিনার পুরনো ও সাম্প্রতিক অনেক কল রেকর্ড প্রকাশ করেছে। যেখানে তিনি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমার দেশের প্রকাশিত এসব কল রেকর্ডের বরাত দিয়ে রনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার যে বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে, তার মাধ্যমে স্পষ্টতে বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি খুব দ্রুত কিছু একটা করতে চাচ্ছেন।’
এদিকে মোস্তফা ফিরোজ ভিডিওতে বলেন, ‘ভারতের থালাপতি বিজয় তামিলনাড়ুর অত্যন্ত জনপ্রিয় নায়ক। বর্তমানে তার রাজনীতিতে উত্থান হয়েছে এবং তার জনপ্রিয়তা নতুন এক মিশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই মিশনে শরিক হতে হাজার হাজার মানুষ সমর্থন দিচ্ছেন। তবে সেই সমর্থনই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল ভারতের তামিলনাড়ুতে বিজয়ের জনসভায় একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। পদদলিত হয়ে নারী, শিশুসহ অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থালাপতি বিজয় শোক জানিয়ে বলেছেন, এটি অসহনীয় যন্ত্রণা এবং অকল্পনীয় এক ঘটনা।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকেও আমি এই ঘটনায় বিপদের আভাস দেখতে পাচ্ছি। ঘটনাটি মূলত নির্বাচনী প্রচার অভিযানের অংশ ছিল। থালাপতি বিজয়ের জনপ্রিয়তার কারণে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে আসেন। প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, কারণ তিনি দেরিতে পৌঁছান। রোদের মধ্যে ক্লান্ত দর্শকেরা যখন অবশেষে তাকে দেখতে পান এবং বক্তৃতা শুরু হয়, তখনই মাঝপথে ঘটে যায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এতে অনুষ্ঠানটি হঠাৎ থেমে যায়।'
তিনি বলেন, 'বর্তমানে পুরো ভারত এই ঘটনায় শোকে মুহ্যমান। একই সঙ্গে অনেক রাজনীতিক সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বলছেন থালাপতি বিজয়কে গ্রেপ্তার করা উচিত, আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন কেন তার নিরাপত্তাব্যবস্থা এত দুর্বল ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এটি আসলে একটি সতর্কবার্তা। বাংলাদেশেও আগামী নির্বাচনে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধরুন, তারেক রহমান দেশে ফিরে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিলেন। বহুদিন অনুপস্থিত থাকার পর তার জনপ্রিয়তাকে ঘিরে বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুল জনসমাগম ঘটতে পারে। একইভাবে জামায়াতও বড় বড় শোডাউন করতে পারে। যদিও তারা তুলনামূলকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ, তবু আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘আমাদের দেশে রাজনৈতিক জনসভায় প্রায়ই দেখা যায়, কোনো এলাকায় দুই গ্রুপের মিছিল বা নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে সংঘর্ষ বাধে। আবার অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে তামিলনাড়ুর মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যায়। তাই নির্বাচনী জনসংযোগ, সভা ও সমাবেশগুলো কীভাবে সীমিত পরিসরে, নিয়ন্ত্রিত সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে করা যায়—সেটা আমাদের ভাবতে হবে।’
তিনি বলেন, তামিলনাড়ুর সাম্প্রতিক এই ঘটনাটি আমাদের সবার জন্যই সতর্কবার্তা। এ নিয়ে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকেও ভাবতে হবে—এ ধরনের হুড়োহুড়ি, ভিড় ও বিশাল জনসমাগম আদৌ প্রয়োজনীয় কি-না। নতুবা তামিলনাড়ুর মতো ভয়াবহ ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি আমাদেরও বহন করতে হতে পারে।
প্রসঙ্গত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন, তার আগমন ঘিরে দলীয়ভাবে বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে—কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন আলোচনা বা গুঞ্জন চলছে। যদিও তিনি ঠিক কবে নাগাদ দেশে ফিরছেন, সে বিষয়ে ঢাকায় বিএনপির নেতারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। তবে তারা বলছেন, শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তারেক রহমান কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে গত ২৫শে সেপ্টেম্বর জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, 'তারেক রহমান ফিরে এসে শুধু বিএনপির নির্বাচনী প্রক্রিয়াই নয়, বরং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শেষ লগ্নের নেতৃত্ব দেবেন।' আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন বলে গত ১২ই সেপ্টেম্বর জানান দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু।
খবরটি শেয়ার করুন