রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান মেম্বার সাকা মিয়া

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৪৪ অপরাহ্ন, ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. সাকা মিয়া। ছবি : সংগৃহীত

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. সাকা মিয়া। ইউপি সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চালিয়ে সংসার চালান তিনি। শুধু সংসার নয়, তার ওয়ার্ডের ভোটারদের সুখ-দুঃখের খবর জানতে তিনি ভ্যান চালিয়ে বাড়ি বাড়ি যান এবং তাদের সাহায্য করেন। 

সাকা মিয়া সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। বয়স ৪৩ বছর। এলাকার মানুষের কাছে তিনি ‘ভ্যানওয়ালা সাকা মেম্বার’ নামেই পরিচিত।

ভ্যান চালাতে চালাতে মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা জাগে সাকা মিয়ার। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও তিনি ভ্যান চালানো বাদ দেননি। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান, পাশাপাশি ভোটারদের সুখ-দুঃখের খবর জানতে নিজের ভ্যানেই সবার বাড়ি বাড়ি যান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে সাকা মিয়াকে এলাকার ভোটাররা দাঁড় করিয়ে দেন। সেবার মাত্র ৪ ভোটে হেরে যান সাকা মিয়া। এরপর ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাকা মিয়া ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। নিজে একজন ভ্যানচালক হওয়ায় ‘ভ্যান গাড়ি’ প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন৷ পোস্টার ছাপানো থেকে শুরু করে নির্বাচনের যাবতীয় খরচ বহন করেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। ভোটারদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়াই করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন ভ্যানচালক সাকা মিয়া।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাকা মিয়া ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গঙ্গা নারায়ণপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিম ও মৃত জমিলা বেগম দম্পতির ছেলে। এক বছর বয়সে বাবা-মাকে হারান। এতিম সাকা মিয়াকে লালন-পালন করেন এক প্রতিবেশী। পরে সেই প্রতিবেশীই তাকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। প্রাথমিকের গণ্ডি না পেরোতেই তিনি জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভ্যান, রিকশা চালানো শুরু করেন। প্রায় ২৫ ধরেই তিনি এ কাজ করে যাচ্ছেন। ২০ বছর আগে বিয়ে করে শুরু করেন জীবন সংসার। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়েই তার জীবন।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সময়ে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে যারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন তারা চোখের পলকে পাল্টে যান। তাদের স্বভাব চরিত্র কথাবার্তার ধরনের রাতারাতি পরিবর্তন হয়। কিন্তু সাকা মিয়ার ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। এদেশের প্রতিটি এলাকায় সাকা মিয়ার মতো লোকেরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে ভোটাররা সবসময় ভালো সেবা পাবেন।

সাকা মিয়ার মেয়ে আলিফা আকতার গণমাধ্যমকে বলেন, গরিব হলেও আমার বাবার মনটা অনেক ভালো। এলাকার লোকজন তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। বাবা যেভাবে মানুষের জন্য কাজ করছে আগামীতেও বাবাকেই তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। 

ইউপি সদস্য সাকা মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ভ্যানে গ্রামের মানুষকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পথে গল্প হয়। এতে করে এলাকার দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। অনেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে ভোটের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেন না বলে অনেকের অভিযোগ। সেসব দেখে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা জাগে। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৪ ভোটে হেরে যাই। পরে ২০২১ সালের অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ভ্যান গাড়ি মার্কা নিয়ে নির্বাচন করলে ভোটাররা বিপুল ভোটে আমাকে নির্বাচিত করেন।

তিনি আরও বলেন, সাধ্যমতো চেষ্টা করছি মানুষের পাশে থাকতে। জনপ্রতিনিধি হয়েছি, মানুষের অধিকার আদায়ে পাশে থাকছি। কিন্তু নিজের পরিবারকে তো বাঁচাতে হবে। তাই আয় করার জন্য ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চালাই। ভ্যান চালানো ছেড়ে দিলে সংসার চলবে কীভাবে? 

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহফুজার রহমান মাফু বলেন, সাকা মিয়া সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দসমূহ সঠিকভাবে বণ্টন করছেন। তার কার্যক্রমে ওই ওয়ার্ডের মানুষ সন্তুষ্ট। নিজের ভ্যান নিয়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের খোঁজ নেন তিনি। তার মতো জনপ্রতিনিধিই দরকার।

এসকে/

সংসার ইউনিয়ন গাইবান্ধা ইউপি সদস্য সাকা মিয়া ভ্যান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন