শনিবার, ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৯ই ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বে একমাত্র বাঙালিরাই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৩:৪২ অপরাহ্ন, ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশে ফেব্রুয়ারি হলো পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেয়া উর্দুকে বাংলার রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে ‘বাংলা ভাষা' প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের রক্তাক্ত দিন। এই দিনে রফিক-শফিক-সালাম-বরকতরা ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মাতৃভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। অবশেষে ১৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ সালে উর্দুর সঙ্গে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের দাবির প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারপর থেকে সারা বিশ্ব দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাতৃভাষার অধিকারের জন্য লড়াই হয়েছে। আবার স্বাধীন দেশের মধ্যেও নিজ নিজ  মাতৃভাষার মানুষের লড়াইতো সবসময় চলছে। নানা দেশে যে আন্দোলনগুলো হয়েছে, সেগুলোর কোনোটা ছিল অহিংস, কোনোটা ছিল সহিংস। কিন্তু পৃথিবীতে বাংলাই একমাত্র ভাষা যার জন্য মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। 

ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লাটভিয়া, বেলজিয়াম, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পৃথিবীর নানা জায়গায় ভাষার দাবিতে সংগ্রাম হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নানা সময় ভাষার দাবি উত্থাপিত হয়েছে। ১৯৬৫ সালে যখন হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা করা হয়, তখন ভারতে সবচেয়ে বড় আন্দোলন হয়। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। মানুষ দলে দলে রাস্তায় নেমে আসে। প্রায় দুই মাস ধরে দাঙ্গা হয় মাদ্রাজে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৭ সালে হিন্দির সঙ্গে ইংরেজিকেও ব্যবহারিক সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

আরো পড়ুন : মানবপাচারের নির্মমতার শেষ কোথায়?

বর্তমানে ভারতে সরকারের তালিকাভুক্ত ২২টি এবং আরো ৪টি ভাষাকে ঐতিহ্যবাহী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যদিও ভারতে মোট ভাষার সংখ্যা কয়েক'শ। কেন্দ্রীয়ভাবে অফিস-আদালতে হিন্দি এবং ইংরেজি ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া ১৯৬১ সালে আসামেও ভাষার প্রশ্নে আন্দোলন হয়েছিল। তৎকালীন প্রাদেশিক সরকার কেবল অহমীয় ভাষাকে আসামের একমাত্র সরকারি ভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনটি হয়েছিল। পরে অবশ্য বাঙলাকেও স্বীকৃতি দেয় প্রাদেশিক সরকার।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৭৬ সালে স্কুল পর্যায়ের ছাত্ররা ভাষার আন্দোলন করেছিল। গাউটাংয়ের জোহানসবার্গ শহরের সোয়েটোতে আন্দোলনটি হয়েছিল। ওই এলাকার কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত শ্বেতাঙ্গ ডাচদের জার্মান-ডাচ ভাষার মিশ্রণের আফ্রিকানার ভাষাকে স্কুলে বাধ্যতামূলক করে। এরপর স্কুলের কিশোররা প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে। কারণ তারা তাদের মাতৃভাষা জুলু এবং ব্যবহারিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ইংরেজিতে শিক্ষা নিতে বেশি আগ্রহী ছিল।

আমেরিকায় অনেক মাতৃভাষার মৃত্যু হয়েছে। গত শতাব্দীর ষাট-সত্তরের দশকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় এই নেটিভ আমেরিকান ভাষা রক্ষার ব্যাপারটিও আসে। মূল প্রস্তাবনার দীর্ঘ ২০ বছর আন্দোলন এবং আলোচনার পর ১৯৯০ সালের ৩০শে অক্টোবর আমেরিকার বিভিন্ন নেটিভ/আদি/স্থানীয় ভাষা রক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য একটি আইন পাস হয়।

কানাডাতে, বিশেষত কানাডার পূর্ব অংশের অঙ্গরাজ্য কুইবেকে কয়েকবারই ভাষার স্বাধীনতা চেয়ে আন্দোলন হয়েছে। লাটভিয়াতে লাটভিয়ান-রাশিয়ার ভাষার মধ্যকার প্রতিযোগিতার কারণে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। গণভোটে লাটভিয়ানরা কয়েক’শ বছরের প্রধান রুশ ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে।

বেলজিয়ামে ফ্রেঞ্চ-জার্মান-ডাচ ছাড়া ইউরোপের বলকান অঞ্চল, স্পেনের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, আফ্রিকার গোল্ড কোস্ট অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় আন্দোলন হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আরবি-ফারসি-তুর্কি ভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। আবার মেক্সিকোর উত্তরাংশে স্প্যানিশ-ইংরেজি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। মাতৃভাষার মর্যাদার দাবিতে  এমনই অসংখ্য আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে।প্রতিটা আন্দোলনই ইতিহাসে বিশেষ স্থান করে আছে।

একুশের চেতনা থেকেই ছয় দফা, ছাত্রদের ১১ দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল। যার  চূড়ান্ত ফল একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। একুশের শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। 

এস/ আই.কে.জে

ভাষা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন