শনিবার, ১লা নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সরকারের ওপর তিন দলের প্রভাব, জামায়াতের কর্তৃত্ব বেশি: আনু মুহাম্মদ *** মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন সাবেক ক্রিকেটার আজহারউদ্দিন *** ভারতে আরএসএস নিষিদ্ধের দাবি জানালেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে *** নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের শুরুতে: ইসি *** হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামী সরকার: গোলাম পরওয়ার *** ১০ মাসে ঢাকায় ঝটিকা মিছিল থেকে অন্তত ৩ হাজার আ.লীগ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার *** এনসিপির জন্য শাপলার কলি প্রস্তাব করেছিলেন রাশেদ খান! *** বিএনপি অন্যায়ভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে: তাহের *** গণভোটের বিষয়ে যে সিদ্ধান্তই হোক, নির্বাচন ১৫ই ফেব্রুয়ারির আগে: শফিকুল আলম *** অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: মির্জা ফখরুল

‘শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারে রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ’

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১২:১৩ পূর্বাহ্ন, ৩১শে অক্টোবর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের প্রভাবশালী তিনটি গণমাধ্যম গত বুধবার (২৯শে অক্টোবর) একই দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। এর এক সপ্তাহ আগে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ক্ষমতাচ্যুতির ১৪ মাস পরে বিশ্বের প্রথম সারির একাধিক সংবাদ সংস্থা, সংবাদপত্র শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করার অর্থ বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব রয়েছে। শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একযোগে সাক্ষাৎকার দিয়ে রীতিমতো রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তুলেছেন।

তাদের মতে, সাক্ষাৎকারগুলো দেশের বর্তমান রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের গভীর চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তার সাক্ষাৎকারে রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে বিশ্বমঞ্চে নতুনভাবে তুলে ধরেছে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা অত্যন্ত কৌশলগতভাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাকে কথা বলতে দেওয়া, তার কথা শোনা—এটা তাকে নরমালাইজেশনের ব্যাপার নয়।

অবশ্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া কিংবা না দেওয়ার প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারগুলোতে শেখ হাসিনার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া গণমাধ্যমে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই বলছেন, পরপর তিনটি নির্বাচনে শেখ হাসিনা নিজেই যেখানে জনসাধারণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন, সেখানে তার মুখে এই ধরনের কথা 'শোভা পায় না'।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতে, কে ভোট দেবেন না দেবেন, এটা বাংলাদেশের জনগণের ব্যাপার। কেউ যদি মনে করেন, বাংলাদেশের মালিকানা কেউ নিয়ে নিয়েছেন, এটা তো সঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ব্যক্তিগত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন, না দেবেন–গণতান্ত্রিক দেশে এটা তাদের নিজের অধিকার। দলটির আরেক নেতা হাসান মাহমুদ টুকু গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন বয়কট করলে তার খুব একটা প্রভাব পড়বে না।

বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোজাম্মেল হোসেন মনে করেন, 'ক্ষমতাচ্যুতির ১৪ মাস পরে বিশ্বের প্রথম সারির একাধিক সংবাদ সংস্থা ও সংবাদপত্র শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রকাশ করার অর্থ হলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব রয়েছে। গুরুত্ব কমছে না। বাড়ছে।'

একযোগে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারগুলো প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক দৈনিক দ্য ইনডিপেনডেন্ট। এগুলো নেওয়া হয়েছে ই–মেইলে। সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যায় তার দায় আছে কী না, আসন্ন সংসদ নির্বাচন, দেশে ফেরা, ট্রাইব্যুনালে তার বিচার এবং রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে লিখিত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। এগুলোই ভারতের জীবনে তার দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকার।

সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একযোগে সাক্ষাৎকার দিয়ে রীতিমতো রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তুলেছেন। এটি কোনো সাধারণ ঝড় নয়—তিনি একে ‘সুনামি’ বা ‘টর্নেডো’ হিসেবে আখ্যা দেন। তার মতে, ‘শেখ হাসিনার এই পদক্ষেপ দেশের বর্তমান রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের গভীর চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।’

গোলাম মাওলা রনির দাবি, ‘আমরা এত দিন ধরে জুলাই সনদ, গণভোট, সংবিধান সংশোধন, আইন-শৃঙ্খলা—এসব বিষয় নিয়ে যে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলাম, শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার হঠাৎ এসে সেই পুরো প্রেক্ষাপটই ওলটপালট করে দিয়েছে। তার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উপস্থিতি সরকারের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি করেছে।'

তিনি আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনা অত্যন্ত কৌশলগতভাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি এমনভাবে চাল চালেন যে প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদেরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। একদিকে সরকার এবং তার পৃষ্ঠপোষক মহল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার তাদের সেই প্রচেষ্টাকে ধাক্কা দিয়েছে। সাক্ষাৎকারগুলো দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে বিশ্বমঞ্চে নতুনভাবে তুলে ধরেছে।'

তিনি আরো দাবি করেন, ‘শেখ হাসিনার এই পদক্ষেপে শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পেন্টাগন, হোয়াইট হাউস, উইলসন সেন্টার বা ডোনাল্ড লুর মতো ব্যক্তিরাও এখন বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তার সাক্ষাৎকার শুধু সংবাদ নয়, এটি দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে, যেখানে সরকার, বিরোধী দল ও আন্তর্জাতিক মহল সবাইকে এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘আমি প্রায়ই বলেছি, শেখ হাসিনাকে কথা বলতে দেওয়া, তার কথা শোনা—এটা নরমালাইজেশনের ব্যাপার নয়। বলেছিলাম, তার (শেখ হাসিনা) ইন্টারভিউ যদি নেওয়া হয়, সেটা আমি নিশ্চয়ই দেখব। সেটি নিয়ে কথা বলব। কথা বলছেনও অনেকে এবং বলা দরকার। তার কর্মকাণ্ড, ভবিষ্যতে কী করতে চান, না চান। অন্তত কীভাবে প্রিটেন্ড করতে চান, নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে চান—এগুলোর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ইম্প্যাক্ট আছে।’

তিনি বলেন, 'একটা ইন্টারভিউতে তিনি (শেখ হাসিনা) বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ দেশের ভবিষ্যৎ ভূমিকা পালনে ফিরে আসবে। সেটা সরকারে হোক, আর বিরোধী দলে হোক। আর তার পরিবারের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ যে ভবিষ্যৎ চায়, তা অর্জন করতে হলে সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেই হবে। কোনো একক ব্যক্তি বা পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।'

জাহেদ বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে তার কর্মকাণ্ড দেখে, যখন তিনি রিপিটেডলি কথা বলছেন, তাতে মনে হতে পারে যে তিনি নেতৃত্বটা হাতে ধরে রাখার জন্য, তার অবর্তমানে বাংলাদেশে যারা আছেন তাদের দিয়ে কোনো ফর্মে একটা আওয়ামী লীগ তৈরির চেষ্টা হয় কি না, সেটা রুখে দেওয়ার জন্যই তিনি ক্রমাগত কথা বলে গেছেন। তথাকথিত কর্মসূচি পালন করতে নেতাকর্মীদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি (শেখ হাসিনা) একটা আন্তর্জাতিকভাবে ইঙ্গিত দিলেন, সব কনটেক্সট যদি আমরা একত্র করি, রিফাইনড আওয়ামী লীগের আলাপটা আমরা আনতে পারব।’

উল্লেখ্য,  জুলাই অভ্যুত্থানে সহিংস দমন-পীড়ন ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলমান। এর আগে ট্রাইব্যুনাল গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো 'বিদ্বেষমূলক বক্তব্য' প্রকাশ বা প্রচার নিষিদ্ধ করে।

মোজাম্মেল হোসেন গোলাম মাওলা রনি জাহেদ উর রহমান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250